রাজধানী ঢাকায় দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজিতে ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত রবিবার ঢাকার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের দাম উঠেছিল প্রতি কেজিতে ৩০০ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার এর দাম উঠেছে ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত
গত সোমবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পাঁচটি ট্রাকে ২৭ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ এসেছে।
এসব কাঁচা মরিচ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে আগামী ২ জুন এই স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় কাঁচা মরিচ আমদানিও বন্ধ থাকছে।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শসা ও টমেটোর দামও বেড়েছে। গত রবিবার রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে শসা বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
গতকাল এর দাম হাঁকা হয় ১০০ থেকে ১৬০ টাকা। দুই দিন আগে টমেটোর দাম ছিল প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। গতকাল দাম উঠেছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রেতারা যে যাঁর ইচ্ছামতো দাম হাঁকছেন।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, রাজধানীতে শসা, টমেটো ও কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। তবে এটি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছে, সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা বাজার ও বসুন্ধরা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দু-তিন ধরনের দেশি কাঁচা মরিচ এবং ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজারে কিছুটা গাঢ় সবুজ মরিচের দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি।
দেশি লম্বা, চিকন ও সামান্য মোটা জাতের মরিচের দাম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। আর ভারত থেকে আমদানি করা মরিচ বিক্রি করা হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারে সাত বছর ধরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেন বাবলু। তিনি বলেন, ‘যতটা জানতে পেরেছি, প্রচণ্ড খরার কারণে মরিচগাছ মারা গেছে। এতে ক্ষেত থেকে মরিচের সরবরাহ কম। এ জন্য দাম বেড়েছে। আড়তদারদের কাছ থেকে ভারতীয় কাঁচা মরিচ কিনেছি ৩২০ টাকা কেজি দরে। বিক্রি করছি ৩৮০ টাকায়।’
তিনি বলেন, ‘ট্রাক আসে আড়তে। আড়ত থেকে কিনে নেয় ফড়িয়ারা, তাদের কাছ থেকে আমরা কিনে বিক্রি করি। কাঁচা মরিচ বিক্রির ধাপ কয়েকটা। ব্যাপারীরা নিয়ে এসে আড়তে দেয়, আড়ত থেকে ফড়িয়ারা বিক্রি করে, সেখান থেকে আমরা কিনে নিই। এভাবে কয়েক হাত বদলের কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক সময় রাতে কিনলে আড়ত থেকে পাই। অন্য সময় ফড়িয়াদের কাছ থেকে নিতে হয়।’
কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে মগবাজার থেকে এসেছেন সুজিত বিশ্বাস। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। তিনি কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ৮০ টাকা কেজি দরে নিয়েছি। দাম বাড়লে তো এত হওয়ার কথা নয়।’
আরেক ক্রেতা মাসুদ বলেন, ‘যে কৃষকরা এই মরিচের চাষ করছে, তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা কেজিতে ১০০ টাকা পায় কি না। এখন সবই সিন্ডিকেটের কবজায় চলে গেছে।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট কাঁচা বাজারে গতকাল ৪০০ টাকা কেজির কমে কাঁচা মরিচ পাওয়া যায়নি। একজন বিক্রেতা দাম হাঁকেন প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে বেশ কয়েকটি দোকানে সবজি বিক্রি হয়। এর একটি দোকানের সবজি বিক্রেতা মো. মাসুদ বলেন, বিন্দি মরিচ ৫০০ টাকা কেজি, দেশি মরিচ ৪০০ টাকা কেজি, ভারতের মরিচ ৩৮০ টাকা কেজি, দেশি শসা ১৪০ টাকা, আর হাইব্রিড ১২০ টাকা কেজি। এত বেশি দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনে আনি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করি। বাজারে এগুলোর সরবরাহ কম। তীব্র গরমে ক্ষেতের গাছ নাকি মারা গেছে। এ জন্য সরবরাহ কম।’
ঢাকার বাইরেও কাঁচা মরিচের দাম চড়েছে। বরিশালের সিটি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী লিমন বাণিজ্যালয়ের জসিম রাজা জানান, সেখানে কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা। খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। টমেটোর পাইকারি দাম প্রতি কেজি ১৩৫ টাকা। খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। শসার পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা।
রাজশাহীতে দাম কিছুটা কম, কিন্তু বেড়েছে। সেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। নগরের তোরোখাদিয়া বাজারের বিক্রেতা আলিমুদ্দিন জানান, গত দু-তিন দিনে সেখানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ১৭ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।