নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০
ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে। একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে। দেশের ইতিহাসে ব্যাংকের জন্য এত আবেদন আর কখনো পড়েনি। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িতসহ সব মিলিয়ে ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। এখন ডিজিটাল ব্যাংকের এসব আবেদন অনুমতি পেলে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা হবে শতাধিক, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য কতগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ ছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের খোলা ওয়েবপোর্টালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ সার্ভারের লক খোলা হয়। দেখা যায়, যৌথ ও এককভাবে মোট ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ আগস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ আগস্ট করা হয়।
সবার আগে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে দশ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই ১০টি ব্যাংক মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক রয়েছে এই উদ্যোগে।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে। বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউসিবির মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে যে জোট আবেদন করেছে, তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনাও। লাইসেন্সের জন্য যত আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিদেশি দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ফিনটেক (প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন) ব্যবসার দক্ষতা রয়েছে।
আবেদনকারীদের মধ্যে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত ঢেউশিট উৎপাদন করে। আরও আছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক। ‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক। তাদের জোটেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।
আবেদনের তালিকায় আছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও। তাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক’। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়ে এখন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যাংকের প্রস্তাবিত নাম দিয়েছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক পেতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বর্তমান সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় গত তিন মেয়াদে এ সরকার ১৩টি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে প্রথম মেয়াদে ৯টি, দ্বিতীয় মেয়াদে একটি এবং বর্তমান মেয়াদের শুরুতে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর বাইরে আরও একটি ব্যাংকের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন আগ্রহপত্র বা লেটার অব ইনটেন্ট জমা দেওয়া হয়েছিল, একাধিকবার সময় বাড়িয়েও শর্ত পূরণ করতে না পারায় তা বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক