অর্থভুবন ডেস্ক
তাকে প্রায় একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরণে সাদা গেঞ্জি আর সাদা প্যান্ট; ডান কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ। প্রখর রোদের মধ্যেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হাতে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্লাকার্ডে লেখা- ‘অসৎ সঙ্গ চাই না’। চলার পথে আমি সাধারণত বিরল চরিত্রের মানুষ দেখলে ছবি তুলি। কিন্তু সাম্প্রতিক ব্যস্ততায় তার ছবি তোলা হয়নি।
গত শুক্রবার ফেসবুক ওয়ালে হঠাৎ তার একটি ছবি চোখে পড়ে। ছবিটি পোস্ট করেন বন্ধুজন আনোয়ার হোসেন। ছবিটার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায়; ভাবনার পরিধি প্রসারিত হতে থাকে। ভাবি তিনি এর মাধ্যমে কী প্রচার করতে চান? নিজের ভেতর নানা প্রশ্নের ভিড়ে মনে হল, সাধারণ একজন মানুষ; কিন্তু তার উদ্দেশ্য তো মহান। আমাদের সমাজে তো এমন মানুষ খুব একটা চোখে পড়ে না।
আজ দুপুরে টিএসসিতে গিয়ে আবারও তার দেখা পাই। ক্যাম্পাসের প্রশস্ত রাস্তায় যানবাহনের ব্যস্ততা। সে দিকে তার খেয়াল নেই। রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দূর থেকে তার কয়েকটা ছবি তুললাম। আমাকে দেখে একগাল হাসলেন। হাসিতে সারল্য ঝরল। পরিচয় দিয়ে আমার ছবি তোলার উদ্দেশ্য জানালাম। তিনি আমার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর গেটে বিশাল বটরাজির ছায়ায় যে উন্মুক্ত লাইব্রেরি সেখানে এসে বসেন। জানলাম তার নাম অমর গোয়ালা। তিনি অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গে দীক্ষিত। ছয় মাস ধরে প্লাকার্ড হাতে নিয়ে তিনি এই বাণী প্রচার করছেন। মানুষের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্যই তিনি এই বাণী প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর এলাকায়ও যান বাণী প্রচারের জন্য।
এত জায়গায় যেতে তো পয়সা লাগে; অর্থ কোথায় পান প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে তাদের একটা ছয়তলা বাড়ি আছে। তার বড় ভাই সেটি দেখাশোনা করেন। বাড়ি ভাড়া থেকে যে অর্থ আসে, সেখান থেকে বড় ভাই প্রতি মাসে তাকে খরচের টাকা দেন। নিজের অর্থেই তিনি বাণী প্রচার করে থাকেন।
প্রায় ৩২ বছর আগে ২০ বছর বয়সে সৎসঙ্গে দীক্ষা নেন অমর গোয়ালা। তিনি জানালেন, ‘বাবা অনুকূল ঠাকুর যখন পাবনাতে সৎসঙ্গের প্রচার চালাতে শুরু করলেন, তখন কিছু কিছু লোক এই ভাবধারার বিরোধিতা করেন। তারা বাবাকে খুব অত্যাচার করলেন। বাবা ভারতের ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে চলে যেতে বাধ্য হলেন। পরবর্তী সময়ে দেওঘর থেকে পূজ্যপাদ আচার্যদেব দাদা, ও অশোক দাদা বাংলাদেশে আবার সৎসঙ্গের প্রচারের ব্যবস্থা করেন। তখন আমি তাদের কাছে সৎসঙ্গে দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাই।’
অমর গোয়ালা ৩৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। দেশের বাড়ি বিক্রমপুরের সিরাজদিখান উপজেলার সন্তোষপাড়ায়। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা দীনেশচন্দ্র ঘোষ আর মা ভানুরানী ঘোষও ছিলেন অনুকূল ঠাকুরের ভক্ত। অকৃতদার এই মানুষটি প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন। হাত মুখ ধুয়ে ইস্টভৃতি করেন। ৫টা ৩৫ মিনিটে বসেন প্রার্থনায়। প্রার্থনা শেষে খালি পেটে একটা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খান। এরপর এক গ্লাস জল। আর সকালে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েন বাণী প্রচারে উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরেন। শুয়ে পড়েন রাত ১১টার মধ্যে।
এই বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে কোনো পরিবর্তন আসছে- এমন প্রশ্নে জবাবে অমর গোয়ালা বললেন, ‘আমার তো মনে হয় আসছে।