মো. শাহাদৎ হোসেন
অর্থভুবন ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও শৃঙ্খলাবোধ দিনদিন কমছে। কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে এ বোধ একটু থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মাঝে নেই বললেই চলে। স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষক ও গুরুজনকে সম্মান দেখাতে একেবারেই অনীহা তাদের মধ্যে। একসময় শিক্ষক দেখলে এগিয়ে গিয়ে সালাম দেওয়ার প্রবণতা ছিল, এখন যেন দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। পড়ালেখায় অমনোযোগিতা, শ্রেণিতে পাঠে মনোযোগ না দিয়ে শিক্ষককে পাঠদানে বিরক্ত করা শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাসায়ও পড়ালেখায় আগ্রহী নয় তারা। শিক্ষক ও বয়োজ্যেষ্ঠ থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে তারা অশিষ্ট আচরণ করে।
এসব নেতিবাচক আচরণের কারণ আসলে কী? আমি মনে করি, এজন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়, অনেক বিষয় এখানে জড়িত। প্রথমত, পরিবারের দায়িত্বশীলদের কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানকে সময় না দেওয়া, তাদের পারিবারিক সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা, স্নেহ-ভালোবাসা না দেওয়া। এর ফলে সন্তানটি যখন বিদ্যালয়ে আসে, সেখানে তাদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষকদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানে তা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আবার শিক্ষকতা পেশায় কিছু অশিষ্ট ব্যক্তি প্রবেশ করায় এ পথটি আর মসৃণ নেই। অনেক শিক্ষকের উদাসীনতা আর দায়িত্বহীনতা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা প্রদানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামে তাদের পাঠ্যবই থাকলেও তাতে আলাদাভাবে নৈতিক শিক্ষার ব্যাবহারিক কোনো আলোচনা নেই। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার অভাব রয়েছে। বিদ্যমান কিশোর গ্যাং নির্মূল হচ্ছে না, ফলে উঠতি বয়সের কিশোরদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিদ্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেদের তৎপরতা না থাকায় বিভিন্ন আসাধু চক্রের সঙ্গে কিশোরদের যোগাযোগের কারণে নেশাসহ বিভিন্ন অপরাধকাজে তাদের যোগদানের প্রবণতা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ ভয়ংকর সামজিক ব্যাধি দমন করা সম্ভব নয়। এ সমস্যা দিনদিন আরও প্রকট আকার ধারণ করার আগেই জরুরি প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যাতে ভবিষ্যতে দেশের জন্য সুনাগরিক গড়ে তোলা যায়।
মো. শাহাদৎ হোসেন : শিক্ষক, গবেষক ও সমাজকর্মী