অর্থভুবন ডেস্ক
ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকে স্মরণ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশে বুধবারের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রিগোজিনকে নিয়ে প্রথমবার নীরবতা ভেঙে বলেন, বুধবার যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটির ঠিক কী হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে তদন্ত করতে সময় লাগবে। প্রিগোজিন সম্পর্কে বৃহস্পতিবার পুতিন আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রিগোজিনকে জানি, সেই ১৯৯০-এর দশক থেকে।’ ‘জটিলতায় ভরা ভাগ্যের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি এবং জীবনে তিনি গুরুতর কিছু ভুলও করেছিলেন।’
প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত হওয়া প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্যে ওই বিমানে ওয়াগনার কোম্পানির কর্মীরা ছিল বলে জানা গেছে।’
‘আমি এটা স্মরণ রাখতে চাই যে এই ব্যক্তিরা ইউক্রেনের নব্য-নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমরা এটা মনে করতে পারি এবং জানি এবং আমরা কখনো এটা ভুলে যাব না।’
প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা : রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বুধবার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। দুই মাস আগে জুনে তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এটা কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি প্রতিশোধ। খবর, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার। ইউক্রেন যুদ্ধে নৃশংস পন্থা অবলম্বন এবং যুদ্ধে সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেন যুদ্ধবাজ প্রিগোজিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্রদের একজন ছিলেন প্রিগোজিন। ২০২২ সালে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রিগোজিনের বেসরকারি সামরিক কোম্পানি যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জুনে প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেনাদের মস্কো যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রিগোজিনের ওই বিদ্রোহ ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয়েছিল।
বিমানে কারা ছিলেন : রাশিয়ার কুশিওনকেনা গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত বিমানে সাত যাত্রী ও তিন ক্রু ছিলেন। রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ওই সাত যাত্রীকে শনাক্ত করেছে। তারা হলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, তার প্রধান সহচর দিমিত্রি দিমিত্রি উতকিন, সের্গেই প্রপুস্টিন, ইয়েভজেনি মাকারান, আলেকসান্দার ততমিন, ভ্যালেরি চেকালভ এবং নিকোলাই মাতুসিয়েভ। ক্রু সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন আলেক্সি লেভশিন, সহ-পাইলট রুস্তাম কারিমভ এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ক্রিস্টিনা রাসপোপোভা।
প্রিগোজিনের সাম্প্রতিক তৎপরতা : রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বল্পস্থায়ী ওই বিদ্রোহের পর থেকে প্রিগোজিন প্রচার প্রচারণা এড়িয়ে চলছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক নেতাদের গ্রহণ করা কৌশলে তিনি বিরক্ত ছিলেন, এই বিরক্তিই তাকে বিদ্রোহের পথে নিয়ে গিয়েছিল। বিদ্রোহ শেষ করতে করা চুক্তি অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয় এবং তিনি বেলারুশে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
কে কী বলছেন : রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রিগোজিনের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঠিক দুই মাস পর এ দুর্ঘটনা ঘটল। প্রিগোজিনের বিদ্রোহ ২৩ বছর ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছিল। কিছু বিশেষজ্ঞ আগেই অনুমান করেছিলেন, যে কোনো মুহূর্তে প্রিগোজিনের মৃত্যু হতে পারে।
বিজ্ঞান ও মহাকাশ নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক মাইলস ও’ব্রিন বিমানটি নিচে পড়ার ভিডিও পর্যালোচনার পর সিএনএনকে বলেন, ‘এটি খুব দ্রুত ঘুরপাক খেয়ে আকাশ থেকে পড়ছিল। বিমান থেকে তখন ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছিল। সুতরাং মনে হচ্ছে, এতে আগুন ধরে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, উড়োজাহাজের কিছু অংশ নেই। তিনি বলেন, বড় ধরনের অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এ ধরনের একটি বিমান এত ভয়ংকর গতিতে নিচে পড়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, বিমানের ভেতরে বা বাইরে শুধু কোনো বিস্ফোরণ ঘটলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হতে পারে বিমানের ভেতরে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে। অথবা এটি লক্ষ্য করে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার আঘাতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে পুতিন জড়িত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আসলে কী ঘটেছিল, আমি তা জানি না। তবে আমি এই দুর্ঘটনায় মোটেই বিস্মিত নই।’ সিআইএ’র পরিচালক বিল বার্নস ও মার্কিন পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। দুজনই পুতিনের দীর্ঘদিনের প্রতিশোধ নেওয়ার ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলছেন, ভিন্ন মতাবলম্বী এবং রাশিয়ার সমালোচকদের ভাগ্যেও এমন রহস্যজনক মৃত্যুই ঘটেছে।