কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। শ্রমজীবী গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর এক হাতে ছিল প্রেমের বাঁশরী, ‘আর হাতে’ বিদ্রোহের তূর্য। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ।
সাহিত্যজগতে তাঁর আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। প্রস্থানও অনেকটা তাই। আজ রবিবার কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
চির লড়াকু নজরুল ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারে দিনটি ছিল ২৯ আগস্ট ১৯৭৬। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মানুষ আজ স্মরণ করবে তাদের প্রিয় কবিকে।
নজরুল যখন লিখতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ তখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও খ্যাতির শীর্ষে। রবীন্দ্রনাথের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে নজরুল সৃষ্টি করেন নিজের প্রভাববলয়।
তাঁর সাহিত্যকর্ম ছিল রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত। একই সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন নতুন ধারার সাহিত্যের পথিকৃৎ। তাঁর সেই নিজস্ব স্বর ও সুর আজও বহমান। কবিতায় নতুন ধারার প্রবর্তক নজরুল বাংলা গজলেরও প্রবর্তক। সাহিত্য, সংগীত, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি—জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল।
তবে ‘যত সব বন্দী-শালায়/আগুন জ্বালা/আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি’ বলা ‘ভাঙার গানে’র নজরুলের জীবন মোটেও মসৃণ ছিল না। লেখার জন্য জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কবি লেখেন ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’। এরই মধ্যে শত বছর পার করেছে তাঁর এই দুই অমর সৃষ্টি। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রকরণগত বৈচিত্র্য, অভিনবত্ব ও স্বাতন্ত্র্য তাঁর কাব্যসাহিত্যকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’ বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে বদলে দিয়েছে। ভাব-ভাষা-ছন্দে অভিনব ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পেয়েছে অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা। আজও পাঠক-গবেষকদের কাছে কবিতাটি সমান সমাদৃত। বাংলা কাব্যসাহিত্যে কবিতাটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। অনেক সমালোচক বলেছেন, এটি বিংশ শতাব্দীর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম।
সাংবাদিকতা ও পত্রপত্রিকা সম্পাদনা নজরুলের কর্মজীবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯২০ থেকে ১৯৪২, অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত নজরুল সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’, দৈনিক ‘মোহাম্মদী’, দৈনিক ‘সেবক’, অর্ধসাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’, সাপ্তাহিক ‘লাঙ্গল’, সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’, সাপ্তাহিক মাসিক ‘সওগাত’ ও দৈনিক ‘নবযুগ’ (নবপর্যায়) পত্রিকার সঙ্গে কখনো সাংবাদিকতা সূত্রে, কখনো স্বত্বাধিকারী, আবার কখনো সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪২ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ বছর কবি নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সপরিবারে কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবিকে ১৯৭৪ সালে এক বিশেষ সমাবর্তনে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুলকে নাগরিকত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। ওই বছর একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়। নজরুলের লেখা ‘চল চল চল’ গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত।
কর্মসূচি
জাতীয় কবির ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠের আয়োজন করেছে। পরে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। এতে স্মারক বত্তৃদ্ধতা দেবেন নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
সকাল ৮টায় জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলা একাডেমি। সকাল ১১টায় একাডেমির অবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নজরুল বিষয়ে একক বত্তৃদ্ধতা দেবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান।