নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমেছে ৩০ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই দুই জেলায় খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ছিল ৫০ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে।
বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের নেওয়া ‘সূচনা’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই দুই জেলায় শাকসবজি উৎপাদনের মাধ্যমে শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
ওই প্রকল্পের কাজের চূড়ান্ত মূল্যায়নে ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আইডিএস) সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে পরিচালনা করে।
মূলত সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘সূচনা’ প্রকল্পের কারণে এই দুই জেলার শিশুদের ক্ষেত্রে এ অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে আইডিএস। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ২০টি উপজেলা এবং ১৫৭টি ইউনিয়নে বসবাসকারী ছয় হাজার ২৫৮ পরিবারের ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘সূচনা’ প্রকল্পের কাজের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন আইডিএস প্রতিনিধি ইনকা ব্যারনেট। তিনি বলেন, সূচনা প্রকল্পের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় খর্বকায় শিশুর হার ৫০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ০-৫ মাস বয়সী শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ হয়েছে।
১২ থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুর খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণের হার ১২.৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাল্যবিবাহের পরিণতি জানে না এমন কিশোর-কিশোরীর হার ২৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অপরিণত বয়সী যারা গর্ভধারণের ফলাফল সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখে না তাদের অনুপাত ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ৩.৫ শতাংশে এসেছে। ৭৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সূচনা প্রকল্পের আওতায় জীবন-জীবিকা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘দেশে দরিদ্র মানুষ আছে, তবে বর্তমানে এই সংখ্যা দিন দিন কমছে। এখন কেউ আর না খেয়ে মারা যায় না। এক দশকে দারিদ্র্য অর্ধেকে নেমেছে। ২০০১ থেকে ১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ১৮ শতাংশে এসেছে। আর অতি দরিদ্রের হার নেমেছে ৪ শতাংশে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকার শহর-গ্রামে খাবার পানি, উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। ফলে আগের তুলনায় স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন দেশের মানুষকে যদি বলা হয় তারা এক গ্লাস উন্নয়ন চায় না এক গ্লাস গণতন্ত্র চায়, তাহল আমার মনে হয় তারা উন্নয়ন চাইবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ‘বৈষম্য বেড়েছে, আমরা সেটা অস্বীকার করছি না। অস্বীকার করে পার পাব না। কিন্তু কেউ না খেয়ে নেই।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের সরকার উদারনীতিতে বিশ্বাস করে। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে। সরকার সবার উন্নয়নে কাজ করে। দেশে আগের তুলনায় দারিদ্র্য অনেক কমেছে। সামনের দিনে আরো কমবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য কমিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
সূচনা প্রকল্পের মাধ্যমে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির কারণে মানুষ আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায় না। আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। এটি মোকাবেলা করা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশিদ। আরো বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের দলনেতা জুরেট স্মালস্কাইট মারভিল, সেভ দ্য চিলড্রেন (ইউকে), গ্লোবাল প্রগ্রামের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডাম বার্থউড প্রমুখ।