বিশ্বজিৎ দাস, সহকারী অধ্যাপক, দিনাজপুর সরকারি কলেজ দিনাজপুর
মেধা, সততা আর একাগ্রতার সমন্বয়ে জীবনের যেকোনো পরীক্ষায় সফলতা আনা সম্ভব
যারা সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছ, তাদের অনেকের কাছে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি অনেক কঠিন মনে হয়। ভয়ের কিছুই নেই। জীবনের কোনো পরীক্ষাই আসলে কঠিন নয়, আবার সহজও নয়। মেধা, সততা আর একাগ্রতার সমন্বয়ে জীবনের যেকোনো পরীক্ষায় সফলতা আনা সম্ভব।
প্রথমেই তোমাকে সচেতন হতে হবে সময় সম্পর্কে।
তিন ঘণ্টার পরীক্ষা। রয়েছে দুটি অংশ। ২৫ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৫০ নম্বরের সিকিউ।
এমসিকিউ অংশে ২৫টি প্রশ্ন দেওয়া থাকবে। ২৫টি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১। ভুল হলে কোনো নম্বর কাটা যাবে না।
উত্তর দিতে হবে ২৫ মিনিটে। সময় নির্দিষ্ট, তাই অপেক্ষাকৃত সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে দেওয়া তোমার জন্য ভালো হবে। অনেক সময় জটিল অঙ্কের এমসিকিউ দেওয়া থাকে। শর্টকাট পদ্ধতি না জানা থাকার ফলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী সেসব অঙ্কের সমাধান দ্রুত বের করতে পারে না। কাজেই সময় সম্পর্কে তোমাকে সচেতন হতে হবে।
সময় নষ্ট করা চলবে না মোটেও।
এমসিকিউ অংশে সাধারণত বিভিন্ন রাশির মান, একক ও মাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে। গ্রাফ সম্পর্কিত একটি বা দুটি এমসিকিউ থাকে। এসব তথ্য পদার্থবিজ্ঞানের মূল বইগুলোতেই পাবে। বিভিন্ন বোর্ডে আসা বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে সহজেই এমসিকিউ অংশে ভালো করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। সিলেবাস সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের প্রথমেই রয়েছে ভৌতজগৎ ও পরিমাপ অধ্যায়টি। এখান থেকে সাধারণত এক বা দুটি এমসিকিউ প্রশ্ন আসে।
ভেক্টর অধ্যায় থেকে সাধারণত নৌকা ও স্রোতের বেগ এবং ডট ও ক্রসগুণন থেকে উচ্চতর দক্ষতা বিষয়ক সমস্যা বেশি আসে। কাজেই তুমি এই দুটি বিষয়ের সমস্যাগুলোর সমাধান অবশ্যই করবে। এ ছাড়া কার্ল, ডাইভারজেন্স ও গ্রাডিয়েন্ট বিষয়ক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর রয়েছে নিউটনিয়ান বলবিদ্যা। এই অধ্যায়টি অপেক্ষাকৃত বড়। এই অধ্যায় থেকে ভরবেগের নিত্যতা সূত্র ও তার প্রয়োগ, রাস্তার বাঁকে গাড়ির বেগ ও ব্যাংকিং, জড়তার ভ্রামক, টর্ক, কৌণিক ভরবেগ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান ভালোভাবে চর্চা করবে।
কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা অধ্যায় থেকে পাম্প ও কুয়া সংক্রান্ত সমস্যা, সরল দোলকের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সূত্রের প্রয়োগসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান চর্চা করতে পারো।
মহাকর্ষ অধ্যায়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে পৃথিবীর উচ্চতায়, গভীরে এবং কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান নির্ণয়, মহাকর্ষীয় বিভব নির্ণয়, মুক্তিবেগ নির্ণয় এবং কৃত্রিম উপগ্রহের আবর্তনকাল ও উচ্চতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান ভালোভাবে চর্চা করবে। এ ছাড়া মুক্তিবেগ, ভূ-স্থির উপগ্রহ, ভরকেন্দ্র, কেপলারের সূত্র ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বেশ গুরুত্ব্বপূর্ণ।
পদার্থের গাঠনিক ধর্ম অধ্যায়ে বিভিন্ন প্রকার তারের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক ও পয়সনের অনুপাত নির্ণয়, তারের সম্প্রসারণে কৃতকাজ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো পরীক্ষায় নিয়মিতই এসে থাকে। এ ছাড়া পয়সনের অনুপাত, বিকৃতি, পীড়ন, স্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাবৃত্ত গতি অধ্যায় থেকে সরল দোলকের সাহায্যে পাহাড়ের উচ্চতা নির্ণয় সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সরল ছন্দিত গতিসম্পন্ন কণার বিভবশক্তি, গতিশক্তি ও মোট শক্তি নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যাগুলোও চর্চা করতে পারো।
আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব অধ্যায় থেকে সাধারণত বুদবুদ ও হ্রদের গভীরতা সংক্রান্ত সমস্যা এবং কোনো স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা প্রায়শ প্রশ্ন করা হয়। এর বাইরে আদর্শ গ্যাসের চাপ ও গতিশক্তি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোও পরীক্ষায় আসতে পারে। এ ছাড়া এ অধ্যায় থেকে বর্গমূল গড় বর্গবেগ, শিশিরাঙ্ক, পরম আর্দ্রতা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, স্বাধীনতার মাত্রা, শক্তির সমবিভাজন নীতি ইত্যাদি থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের প্রথমেই রয়েছে তাপগতিবিদ্যা অধ্যায়। এ অধ্যায় থেকে সমোষ্ণ ও রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ার গাণিতিক সমস্যাবলি, তাপ ইঞ্জিনের দক্ষতা এবং এনট্রপির পরিবর্তনসংক্রান্ত উচ্চতর দক্ষতা বিষয়ক সমস্যার সমাধান অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সমোষ্ণ ও রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া, প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া, পানির ত্রৈধ বিন্দু, তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম ও প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এনট্রপি, কার্নো ইঞ্জিন ইত্যাদি থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রতিবছরই পরীক্ষায় আসে।
স্থির তড়িৎ অধ্যায়ে সংজ্ঞা রয়েছে অনেক বেশি। যেমন—বিন্দু চার্জ, এক কুলম্ব, আধানের কোয়ান্টায়ন, তড়িৎ বলরেখা, সমবিভব তল, সুষম তড়িেক্ষত্র, ধারকের ধারকত্ব, তড়িৎ দ্বিমেরু ভ্রামক, তড়িৎ প্রাবল্য, তড়িৎ বিভব, গাউসের সূত্র ইত্যাদি। এ অধ্যায় থেকে তড়িৎ বিভব ও তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় সংক্রান্ত উচ্চতর দক্ষতার সমস্যাবলি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ধারকের ধারকত্ব নির্ণয়, ধারকের সমবায় এবং সঞ্চিত শক্তির সমস্যাগুলো সব পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চল তড়িৎ অধ্যায় মানেই বর্তনী এবং এসংক্রান্ত সমস্যাবলি থাকবেই থাকবে। এ ছাড়া কোষের সমবায়, কির্শফের সূত্র, হুইটস্টোন ব্রিজ, মিটার ব্রিজ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো ভালো করে চর্চা করবে। রোধের তাপমাত্রা গুণাঙ্ক, রোধের সূত্র, এমিটার, ভোল্টমিটার ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ভৌত আলোক বিজ্ঞান অধ্যায় থেকে সাধারণত হাইগেনসের নীতি, ব্যতিচার, অপবর্তন, সমবর্তন ইত্যাদি থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন করা হয়। ইয়ং-এর দ্বি-চির পরীক্ষা ও একক চিরের দরুন অপবর্তন থেকে উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নগুলোর সমাধান ভালোমতো চর্চা করতে পারো।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা অধ্যায়টির অংশবিশেষ রয়েছে পরিবর্তিত সিলেবাসে। আইনস্টাইনের সময় প্রসারণ, দৈর্ঘ্য সংকোচন, ভরের আপেক্ষিকতা এবং ভর-শক্তি সমীকরণ সংক্রান্ত উচ্চতর দক্ষতার সমস্যাগুলোর সমাধান করলে পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে বলে আশা করি। পরমাণুর গঠন ও নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান অধ্যায়টি অপেক্ষাকৃত সহজ। এখান থেকে সাধারণত তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া হাইড্রোজেন পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষপথের ব্যাসার্ধ ও শক্তি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোও চর্চা করতে পারো। নিউক্লীয় ফিশন ও ফিউশন, অর্ধায়ু, গড় আয়ু, বোরের পরমাণু মডেলের স্বীকার্যসমূহ, পারমাণবিক ভর একক ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রায়শই পরীক্ষায় আসে।
দ্বিতীয় পত্রের সর্বশেষ অধ্যায় হলো সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস। পিএন জাংশন, ডায়োড, ট্রানজিস্টর সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করলেই আশা করি, পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যান্ড, পিওএন টাইপ ডায়োড, বায়াসিং, জেনার ডায়োড, রেকটিফায়ার, পিএনপি ও এনপিএন ট্রানজিস্টর, এমপ্লিফায়ার থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।