অর্থভুবন ডেস্ক
একটুর জন্য ব্যর্থ হয়ে যাওয়া মিশন ‘চন্দ্রযান-২’-র পর কেটে গেছে চার বছর। এই চার বছরে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরোদমে কাজ করে গেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। সম্প্রতি মহাকাশে দীর্ঘ ১ মাস ৯ দিনের যাত্রা শেষে চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-৩’। এই অভিযান সফল করতে প্রায় এক হাজার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫৪ জন নারী বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন, যাঁরা চন্দ্রযান-৩ মিশনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন। ভারতে মহাকাশ মিশনের নেতৃত্বদানকারী নারীদের মধ্যে আছেন ভি আর ললিথম্বিকা, ভানিতা মুথাইয়া, নন্দিনী হরিনাথ, ঋতু করিধালসহ অনেকে।
ভি আর ললিথম্বিকা
ইসরোর নারী বিজ্ঞানীদের নামের তালিকায় সবার আগে যাঁর নামটি উঠে এসেছে, তিনি হলেন ভি আর ললিথম্বিকা। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে জন্ম নেওয়া ডক্টর ভি আর ললিথম্বিকা অ্যাডভান্সড লঞ্চার টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ। ইসরোর ‘গগনযান’ মিশনের পরিচালকের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতীয় নভোচারীদের মহাকাশের গভীরে পাঠানো। ললিথম্বিকা অংশ নিয়েছেন ইসরো পরিচালিত ১০০টির বেশি মিশনে। লঞ্চ ভেহিক্যাল টেকনোলজিতে তুমুল প্রজ্ঞার কারণে ‘অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে।
ভানিতা মুথাইয়া
তালিকার অন্যতম নাম ভানিতা মুথাইয়া। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ইসরোতে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি। চন্দ্রযান-২ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন ভানিতা। বর্তমানে ইসরোর বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। ভানিতাই ইসরোর প্রথম নারী প্রজেক্ট ডিরেক্টর। ২০০৬ সালে তাঁকে ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র তরফে ‘সেরা নারী বিজ্ঞানী’র পুরস্কার দেওয়া হয়।
নন্দিনী হরিনাথ
নন্দিনী হরিনাথ দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসরোতে কাজ করে চলেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি ১৪টির বেশি মিশনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল ইসরোতেই। প্রতিষ্ঠানটির মার্স অরবিটার মিশন বা মম অভিযান বা মঙ্গলযান অভিযানের ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর ছিলেন নন্দিনী। বর্তমানে তিনি ইসরোর প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং মিশন ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত।
অনুরাধা টি কে
ইসরোর অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনুরাধা টি কে। যোগাযোগ সহায়ক উপগ্রহের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ইসরোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত প্রায় ৩৪ বছর ইসরোতে কাজ করেন অনুরাধা। কর্মজীবনে তিনটি যোগাযোগ সহায়ক উপগ্রহ জিস্যাট-৯, জিস্যাট-১৭ ও জিস্যাট-১৮-এর উৎক্ষেপণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ইসরোতে কাজ করা প্রথম নারী হিসেবে তিনি স্যাটেলাইট প্রজেক্ট ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ঋতু করিধাল
১৯৯৭ সাল থেকে ইসরোতে কাজ করছেন বিজ্ঞানী ঋতু করিধাল। মঙ্গলযানের সাফল্যের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। ২০২১ সালে ঋতুকে ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল’-এ নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ভারতের তখনকার রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের কাছ থেকে ‘ইসরো ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ পান তিনি। বর্তমানে ঋতু ইসরোর অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।
মৌমিতা দত্ত
কলকাতার মানুষ মৌমিতা দত্ত একজন পদার্থবিদ। ‘মম’ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০৬ সালে আহমেদাবাদের ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে’ যোগ দেন মৌমিতা। হাইস্যাট ও চন্দ্রযান-১ অভিযানের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ‘মঙ্গলযান’ অভিযানে মৌমিতার অবদানের জন্য তাঁকে ইসরোর ‘টিম অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি ইসরোর একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা ইমেজিং স্পেকট্রোমিটারের ওপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল যন্ত্রের দেশীয় উন্নয়নে কাজ করছে।
মিনাল রোহিত
মেধাবী বিজ্ঞানী মিনাল রোহিত ইসরোর একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার। ‘নিরমা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইসরোতে যোগ দেন তিনি। মঙ্গলযানের সিস্টেম মনিটরিং এবং মিথেন সেন্সরের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন মিনাল।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস ও বিবিসি নিউজ