অর্থভুবন প্রতিবেদক
বিশ্বে প্রতিদিন যেমন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। সম্প্রতি কম্পিউটার নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক প্রতিষ্ঠানের তরফে জানানো হয়েছে- পৃথিবীর দুই- তৃতীয়াংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হন। আর এর মধ্যে স্বল্পসংখ্যক ব্যবহারকারীই কেবল মনে করেন যে এ আপদ থেকে একদিন তাদের মুক্তি ঘটবে। দেশের হিসাব করলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হন চীনের নাগরিকরা। সেখানে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ৮৩ জনই কোনো না কোনোভাবে কম্পিউটার ভাইরাসের শিকার।
তারা যেসব সমস্যায় পড়েন তার মধ্যে রয়েছে- পরিচয় কিংবা পাসওয়ার্ড চুরি। রয়েছে আরও বিচিত্র ধরনের সাইবার যন্ত্রণা। নর্টনের এক সাইবার অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে, চীনের ঠিক পেছনের ৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে জোড়া বেঁধে রয়েছে ব্রাজিল আর ভারত, আর তাদের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের ১০০ জনে ৭৩ জনই সাইবার অপরাধের শিকার হন। কে চায় এ যন্ত্রণা পোহাতে! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এর প্রতিকারের বিষয়টি বেশ জটিল। জানা গেছে, দু-একজনের অভিযোগ হলে বিষয়টি পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকর্মী একেবারে কানেই তোলে না। যদি ঢালাওভাবে অনেকের অভিযোগ একসঙ্গে পুলিশের কাছে আসে কেবল তখনই তাদের টনক নড়তে দেখা যায়। সাইবার অপরাধবিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডাম পামার জানিয়েছেন, এ সাইবার অপরাধীরা ভীষণ ধড়িবাজ। তারা নিজেদের আড়াল করতে একেবারে দাঁও মারার বদলে সারাক্ষণই ছোটখাটো টুকিটাকি অপরাধ করে বেড়ায়। ফলে তাদের সহজে ধরাছোঁয়া যায় না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সাইবার অপরাধের এ বিন্দু বিন্দু পানিই একসঙ্গে জড়ো করলে অপরাধের সাগর সৃষ্টি হবে। এ সংকট এখন পৃথিবীময় সব কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্যই এক ভয়াবহ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, অধিকাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারীই এসব সাইবার অপরাধ ঠেকানোর জন্য কোনো কিছু করা বেশ ঝামেলা বলেই মনে করেন। এক্ষেত্রে তাদের এ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকাটাও এ সাইবার অপরাধীদের বাড়বৃদ্ধির এক অন্যতম কারণ। জানা গেছে, কানেক্টসেফলি-ডট-অর্গ নামের একটি মার্কিন সংস্থা সম্প্রতি নর্টনের সঙ্গে মিলে এক গবেষণা চালিয়েছিল। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- সাইবার অপরাধ ঠেকানোর বিষয়টি সম্পর্কে যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে খানিকটা সচেতনতা বাড়ে, সেক্ষেত্রে এসব ছিঁচকে সাইবার চোরের চুরি ঠেকানো কোনো বিষয়ই নয়! ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে তারা। এর জন্য কেবল প্রত্যেকের কম্পিউটারে জায়গামতো নিরাপত্তার বিষয়টি রাখতে হবে আর সেটিকে সময়ানুগ ও সচল রাখতে হবে।
তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানত একটি মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। বর্তমান শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, যোগাযোগ, গণমাধ্যম, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, চিকিৎসাসহ আমাদের সমাজজীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার অনুপস্থিত। ইন্টারনেটের ফলে গোটাবিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ খ্যাত যে ধারণা আমরা পোষণ করে থাকি তা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট সুবিধার ফলে। বিশ্বে বর্তমানে ইন্টারনেট প্রযুক্তির জয়জয়কার। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেখানে তথ্যপ্রযুক্তিকে দিনবদলের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করছেন সেখানেও ইন্টারনেটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইন্টারনেটের নানারকম ব্যবহারিক সুবিধার ফলে সর্বত্রই এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের ভালো-মন্দ দুটো দিকই সমাজে লক্ষণীয়। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি ইস্যু হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিরাপত্তা। বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আইটিভিত্তিক নিরাপত্তা জোরদার করতে নানারকম উদ্যোগ ও সাধারণ মানুষের তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর জীবনকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন টিপস প্রদান করেছেন। ইন্টারনেটের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে চ্যাট, গেম, মিউজিক ডাউনলোড, গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যের সমাবেশ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, শিক্ষা-গবেষণা, বাণিজ্যসহ নানা কার্যক্রমের সমন্বয়ে বর্তমান ইন্টারনেট শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিশ্বস্বীকৃত। সবদিক বিবেচনায় ইন্টারনেট বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও খুবই উপকারী একটি মাধ্যম হিসেবে সর্বজনবিদিত, পাশাপাশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে রক্ষিত ব্যক্তিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো রয়েছে সর্বদা হুমকির মুখে। তাই কম্পিউটার-ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারে ঝুঁকির মাত্রা রয়েছে অধিক। তবে ঝুঁকির মাত্রা সাধারণত সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্রাউজিংয়ের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কিছু কলাকৌশল জানলে যেমন সাইবার ঝুঁকি থেকে অনেক বেশি নিরাপদ থাকা যাবে তেমনি ব্রাউজিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে প্রতিনিয়তই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কলাকৌশল না জেনে অজ্ঞতা সহকারে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ম্যালওয়ার আক্রমণে গোটা সিস্টেমটাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং খুব সহজেই তা হ্যাকারের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।