বিবিএসের প্রতিবেদন :- রাজধানীর পাশের জেলা হিসেবে গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জেও বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ। কর্মসংস্থানের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকায় চাপ কমানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
অর্থভুবন প্রতিবেদক
পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ জন মানুষ বাস করেন। কিন্তু এই নগরীর চারটি এলাকা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। এ চারটি এলাকা হচ্ছে-লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া এবং সবুজবাগ। এসব এলাকায় প্রতি একর আয়তনে বাস করে প্রায় ৮০০ মানুষ। তবে মেগা সিটির মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি একর আয়তনে জনসংখ্যা থাকার কথা ১২০ জন।
বিশ্লেষকদের মতে, সব ধরনের সেবা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ঢাকায়। সরকারি অফিস আদালত, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের হেড অফিস, ভারী ও মাঝারি শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় মানুষের সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই। এ ছাড়া শিল্প-কল-কারখানার অধিকাংশই রাজধানী এবং এর আশপাশে হওয়ার কারণে বিশাল জনগোষ্ঠী বাস করে এই বিভাগে। ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাই কোর্ট, আবহাওয়া অধিদফতর, বন ভবন, খাদ্য ভবন, পানি ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়গুলো সহজেই স্থানান্তর বা বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়। কিন্তু কোনো সরকার এতে আগ্রহ দেখায়নি। এ ছাড়া বিভাগ ও অন্য জেলাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে মানুষ আপনা-আপনিই ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হবে। এতে ধীরে ধীরে বাসযোগ্যতা ফিরে পাবে ঢাকা বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব।
বিবিএসের প্রকাশিত সার্ভে অন আইসিটি ইউস অ্যান্ড এক্সেস বাই ইন্ডিভিউজুয়্যাল অ্যান্ড হাউজহোল্ড-২০২৩ এর তথ্যমতে, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬৭ লাখ ১৯ হাজার ৫২২ জনই বাস করেন ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে। যার অর্ধেকই শুধু ঢাকাতে বসবাস করেন। এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর তথ্যমতে, রাজধানীর ৬৩ শতাংশ এলাকাতে প্রতি একরে ৩০০ লোক বসবাস করে। ৪০ শতাংশ এলাকায় বাস করে ৪০০ লোকের বেশি। ঢাকার বাইরে জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দুবাইয়ের আয়াল নাসির এলাকা। সেখানে প্রতি একরে ৬০০ লোকের বাস। তৃতীয় অবস্থানে কেনিয়ার নাইরোবি। সেখানে প্রতি একরে বাস করে ৪৬০ জন। চতুর্থ অবস্থানে মুম্বাইয়ের জাভেরি নামক এলাকা। বিবিএস ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর তথ্যমতে, ঢাকা মেগা সিটিতে প্রতিদিন নতুন করে যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ মানুষ। এই মুহূর্তে এর মোট জনসংখ্যা ২ কোটির কাছাকাছি। ১ কোটির অধিক মানুষ যেসব শহরে অবস্থান করে সেই শহরকেই মেগা সিটি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সেই সূত্রে ঢাকাও একটি মেগা সিটি। উইকিপিডিয়া ও ইউএনএফপিএর তথ্যমতে, বর্তমান পৃথিবীতে মোট ২১টি মেগা সিটি রয়েছে যার জনসংখ্যা ১ কোটি তথা ১০ মিলিয়নের ওপর। শহরগুলো হলো- জাপানের টোকিও, ওসাকা, ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, ব্রাজিলের সাও পাওলো, রিও ডি জেনেরিও, মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, চীনের সাংহাই, বেইজিং, বাংলাদেশের ঢাকা, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ারস, পাকিস্তানের করাচি, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, মিসরের কায়রো, রাশিয়ার মস্কো, ফ্রান্সের প্যারিস, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও নাইজেরিয়ার লাগুস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রবিউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে বহুদিন ধরেই বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকায় মানুষের আগমন কমাতে না পারলে ঢাকাকে বাঁচাতে কোনো পরিকল্পনাই যথেষ্ট হবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, খাবার ইত্যাদিতে ঢাকাই সেরা, এমন মানসিকতা পরিবর্তনে কাজ করা জরুরি। একই সঙ্গে প্রশাসন, শিক্ষা, শিল্প খাতসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং অফিস-আদালতকে ঢাকা থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমে আসবে।