বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) থেকে জমি ও যন্ত্রাংশ মর্টগেজ রেখে ঋণ নেয় সুবাত নিট কম্পোজিট লিমিটেড। তবে ঋণ নেওয়ার পর এসব সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংক থেকে আত্মসাতের টাকায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সুলতান গাজীপুরে গড়েছেন সুলতান মার্কেট। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষের করা মামলা তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, জমিসহ কারখানা এবং যন্ত্রাংশের বিপরীতে ২০১৬ সালে দীর্ঘমেয়াদি এবং চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ৯ কোটি টাকা ঋণ নেয় সুবাত নিট কম্পোজিট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সুলতান, চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম এবং জিল্লুর রহমান ব্যাংক থেকে নেওয়া এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। এমনকি তারা ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করে দেন মর্টগেজ হিসেবে রাখা কারখানার যন্ত্রাংশগুলো। পরে ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে মর্টগেজ হিসেবে দেখানো সব যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষের করা মামলা তদন্তভার পেয়ে কাজ শুরু করে সিআইডি।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মামলাটির সার্বিক তদন্ত শেষে বিডিবিএলে মর্টগেজ সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এসএম সুলতান, মো. আবুল কালাম আজাদ, রাশেদুল ইসলাম এবং জিল্লুর রহমান খানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের আসামি করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিডিবিএলের এই মামলার তদন্তকারী দেশ রূপান্তরকে জানান, বিডিবিএল ব্যাংকের মর্টগেজ সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের মূল পরিকল্পনাকারী এসএম সুলতান। তার পরিকল্পনাতেই সুবাত নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান করা হয়। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য যন্ত্রাংশও আমদানি করা হয়। এসবের বিপরীতে ঋণগ্রহণের পর কোনোপ্রকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা না করে উল্টো এসব সম্পদ বিক্রি করে দেন। বিডিবিএলের আত্মসাৎ করা অর্থে এসএম সুলতান গাজীপুরের কাশিমপুরে নিজের নামে একটি মার্কেট করেন। সুলতান মার্কেট নামের চারতলা ভবনটির নিচতলা ও দোতলায় দোকান আর তিনতলায় থাকেন এসএম সুলতান নিজেই।
সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সুবাত নিট কম্পোজিটকে ঋণ দেওয়ার পর তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সঠিক নিয়মে যাচাই-বাছাই করেনি ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ। এমনকি সরেজমিন পরিদর্শনও হয়েছে বেশ দেরিতে। ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম নিয়মিত করা গেলে মর্টগেজ সম্পদ বিক্রির সুযোগ পেতেন না সুবাত নিট কম্পোজিটের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ঋণ প্রদানের পরেও তাদের সার্বিক কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা গেলে ব্যবসার টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেতেন না সুবাত নিট কম্পোজিটের ওইসব কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুবাত নিট কম্পোজিট লিমিটেড মর্টগেজকৃত জমি ও মালামালের বিপরীতে মঞ্জুরি করা দীর্ঘমেয়াদি ও চলতি মূলধন প্রায় ৯ কোটি টাকা উত্তোলন করে। গৃহীত ঋণটি সার্কুলারের শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ার ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ প্রদত্ত সুবিধাগুলো বাতিল করেন। পরে আবার তফসিলকৃত হিসাবের ঋণের কিস্তি অপরিশোধিত থাকায় ব্যাংকের কাছে বন্ধকি প্রকল্পের অবস্থানসহ মেশিনারিজের হালনাগাদ অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সরেজমিনের পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুবাত নিট কম্পোজিট পরিদর্শন করেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে মর্টগেজ করা মেশিনারিজসহ কোম্পানির অবকাঠামোর অস্তিত্ব পাননি। শুধু প্রকল্প ভূমির চারদিকে দেয়ালবেষ্টিত টিনশেড দেখতে পায়।