অর্থভুবন ডেস্ক
খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত চিনি আমাদের শরীরের ক্ষতির পাশাপাশি ত্বকেরও ক্ষতি করছে। কিন্তু চিনি কী করে ত্বকের ক্ষতি করে তা আমরা অনেকেই জানি না। জানালেন বিউটি ব্লগার নাহিন ইসলাম চিনি এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। আর এই কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। প্রাকৃতিক চিনি আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যেই পাই। যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রসেসড ফুড ও বেভারেজ যেমন সোডা, ক্যান্ডি, কেক, কুকিজে ব্যবহার করা হয় এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য। আবার টেক্সচার, কালার ও টেস্টের ভিত্তিতে চিনির ধরন ভিন্ন হয়। সাদা চিনি, লাল চিনি, পাউডার সুগার, কর্ন সিরাপ এই কয়েক ধরনের চিনি বাজারে পাওয়া যায়। ধরন যা হোক না, এটা খাবার মিষ্টি করে ও ক্যালরি প্রদান করা।
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে, ওবেসিটি, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ডেন্টাল প্রবলেমসহ আরও নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স অনুযায়ী পরিমিত চিনি গ্রহণ করা উচিত। ন্যাচারাল যেসব খাবারে চিনি আছে তা খেলে শরীরে শর্করার জোগান দিয়ে শক্তি বাড়াবে।
ত্বকের ক্ষতি
খাদ্যাভাসের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
অল্প বয়সে বলিরেখা
আমাদের ত্বকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন থাকে, যা আমাদের ত্বককে নরম ও কোমল করে। অতিরিক্ত চিনি এই কোলাজেনের সঙ্গে ক্রস-লিঙ্কিং করে ত্বককে শুষ্ক ও অমসৃণ করে। চিনির সঙ্গে কোলাজেনের এই ক্রস-লিঙ্কিংকে বলা হয় গ্লাইকেশন। এর ফলেই ত্বকে দেখা দেয় রিঙ্কেলস বা প্রিম্যাচিউর এজিং সায়েন্স।
ব্রণ বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে ত্বকে সিবাম প্রোডাকশন বেড়ে যায়। সিবামের বৃদ্ধি বেশি হলে ত্বকে ব্রণ বেড়ে যায়। ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণের কারণ খাবারে নানা রকমের চিনি জাতীয় স্ন্যাক্স, সোডা, প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট দায়ী থাকে।
অ্যালার্জি দেখা দেয়
অনেকের ত্বকেই অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। এই সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে। এ ছাড়াও একজিমা, রোজেশিয়া, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত চিনি।
ডাবল চিন ও গলার চামড়া ঝুলে যাওয়া
অনেকের ডাবল চিন দেখা যায়। কারও কারও আবার গলার চামড়া ঝুলে যায়। এ সমস্যার প্রধান কারণ খাবারে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ।
হাইপার-পিগমেন্টেশন হওয়া
ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশনও অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলেই হয়।রোদ-বৃষ্টির সাজপোশাক
এই বৃষ্টি তো, এই রোদ্দুর। প্রকৃতিতে এখন রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছে। তাই এ সময় বুঝে ওঠা মুশকিল, ঠিক কী ধরনের পোশাক, সাজ ও অনুষঙ্গ পরে বাইরে বের হবেন। জানালেন রবিউল কমল
আপনি হয়তো রোদ দেখে হালকা পোশাক পরে বাইরে বের হলেন, কিন্তু কিছু দূর যেতেই ঝুম বৃষ্টি। আর তাতেই আপনি নাজেহাল। আবার মেঘলা আকাশে দেখে একটু ভারী পোশাক পরে বের হলেন, কিন্তু বিপত্তি বাঁধল মাঝপথে গিয়ে। আকাশ পরিষ্কার হয়ে রোদ প্রচন্ড উত্তাপ ছড়াতে শুরু করল। আর তাতে ঘেমে আপনার অবস্থা বেহাল। তাই এ সময় পোশাক পরতে হবে একটু ভেবে, বাছাই করে। শুধু সঙ্গে কিছু অনুষঙ্গও রাখতে হবে।
ফ্যাশন ডিজাইনার সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। এখন শরৎকাল, এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি আবার হঠাৎ রোদ খেলা চলে। তাই পোশাক বাছাইয়ে বেশ সাবধানী হতে হবে। এ সময় ভারী পোশাকের চেয়ে হালকা বা ছিমছাম পোশাক বেশি মানানসই। তাহলে খুব রোদ থাকলেও সমস্যা হবে না। আবার হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও ঝামেলায় পড়তে হবে না। যেহেতু এ সময় বাতাস আর্দ্রতা থাকে, ভ্যাপসা গরম থাকে তাই কাপড় হতে হবে আরামদায়ক। এ সময় হাফ সিল্ক, জর্জেট, লিনেন বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার অনেকে সুতি কাপড় পছন্দ করেন। গরমে সুতি আরামদায়ক হলেও বর্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, কারণ সুতি শুকাতে সময় নেয় বেশি। সে ক্ষেত্রে যারা সুতি পছন্দ করেন তারা মেশানো সুতি কাপড় বেছে নিতে পারেন।
সিল্ক জাতীয় কাপড়ের পোশাক এ সময় এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ, হঠাৎ বৃষ্টি নামলে কাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেকে আবার জর্জেট পরতে চান, তবে কিছুটা সংকোচে থাকেন। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই। নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন কিছুটা ভারী জর্জেট কিংবা ডাবল জর্জেট বা
ক্রেপ কাপড়।
ফ্যাশন ডিজাইনার আনিকা ফারজানা বলেন, এ সময় শুধু কাপড় নয়, নকশার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। যেমন বেশি ঘেরওয়ালা বা লম্বা পোশাক পরা ঠিক হবে না। হঠাৎ বৃষ্টি লম্বা পোশাকের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। বৃষ্টিতে যেহেতু রাস্তায় পানি ও কাদা হয়ে যাবে, তাই লম্বা পোশাকে কাদার ছোপ ছোপ দাগ লাগতে পারে। তাই সেমি লম্বা পোশাক বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বৃষ্টির পোশাক মানে নীল রঙÑ এ ধরনের ধারণা দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখন যেহেতু শরতের বর্ষা তাই রঙ হিসেবে বেছে নিতে পারেন ধূসর বা সাদা রঙের পোশাক। তাহলে, বৃষ্টি থেকেও যেমন নিরাপদ থাকা যাবে, একইভাবে রোদের তাপ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
ডিজাইনার রাহুল খান জানান, কর্মজীবী নারীরা পরতে পারে লিনেনের টপ। তার সঙ্গে নীল টাই-ডাইয়ের স্কার্ফ। কিংবা আকাশি নীল শাড়িও মানিয়ে যাবে সহজে। তার মতে, এ সময় সিম্পল মেকআপ করতে হবে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ভালো ব্র্যান্ডের ওয়াটার প্রুফ মেকআপ ব্যবহার করতে হবে। আর ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলাই ভালো। হালকা কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করতে পারেন। তাতে আপনাকে বেশ আকর্ষণীয় লাগবে। কপালে একটি টিপ পরলে আরও মানিয়ে যাবে। তবে, গ্লসি মেকআপ এড়িয়ে চলতে হবে। গয়না ছাড়া সাজ একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে এই আবহাওয়ায় গয়না বাছাইয়ে বাড়তি সতর্কতা দরকার। আপনি যদি কাঠ, মাটি, পাট, কাপড়ের তৈরি গয়না পরতে পছন্দ করেন, তাহলে এ সময়ে তা এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, হঠাৎ বৃষ্টি নামলে এসব উপকরণের তৈরি গয়না নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এ সময় পানিরোধী গয়না পরতে হবে। তাই অক্সিমেটাল ও উজ্জ্বল রঙের হালকা গয়না এ সময়ের জন্য মানানসই।
শুধু পোশাক ও সাজ নিয়ে ভাবলে তো হবে না। পোশাকের সঙ্গে আরও অনুষঙ্গ পরতে হয়, সেগুলো নিয়েও ভাবতে হবে। এমন আবহাওয়ায় সব ধরনের পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিয়েই বাইরে বের হতে হবে। যেমন- জুতা-স্যান্ডেল, ব্যাগ, গয়নার মতো অনুষঙ্গ। এ সময় এমন উপকরণ বেছে নিতে হবে, যা রোদ বা বৃষ্টিতে নষ্ট হবে না।
রোদ-বৃষ্টির আবহাওয়ায় কেমন জুতা পরতে হবে জানতে সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ফ্লিপ ফ্লপ, স্লিপার, স্লাইড, প্ল্যাটফরম ক্লগসহ নানা নকশার স্যান্ডেল বেছে নেওয়া যেতে পারে। বুট জুতা, ব্যালেরিনা শু এবং স্নিকারও পরা যেতে পারে, তাহলে হঠাৎ বৃষ্টি হলেও কাদা লাগার ভয় থাকবে না। জুতা বা স্যান্ডেল পরলে এমন জুতা বেছে নিতে হবে, যেন ভেজা রাস্তায় পা পিছলে না যায়। আবার উঁচু হিল এ সময় এড়িয়ে চলাটাই ভালো হবে। আবার কাপড় বা চামড়ার জুতা না পরলেই ভালো। না হলে বৃষ্টিতে ভিজে চামড়ার জুতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বাইরে বের হলে এ সময় সঙ্গে ছাতা রাখা উচিত। ছাতাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে চলা বা বাড়তি অনুষঙ্গ ভাবা ঠিক হবে না। কারণ ছাতা এমন আবহাওয়ার জন্য খুব জরুরি। বাইরে বের হয়ে মাঝপথে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে তখন সবচেয়ে উপকারী অনুষঙ্গ কিন্তু ছাতাই হবে। কিংবা প্রখর রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে ছাতার বিকল্প নেই। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সঙ্গে একটি ছাতা রাখুন। আবার ব্যাগের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কারণ ছাতা আপনাকে রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করলেও ব্যাগ বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে। আর ব্যাগের মধ্যে দরকারি অনেক জিনিস থাকে। তাই ব্যাগ ভিজে সেই দরকারি জিনিসগুলোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য সেগুলোকে নিরাপদ রাখতে সঠিক ব্যাগ বেছে নিতে হবে। নাইলন বা প্লাস্টিকের মতো পানিরোধী উপকরণে তৈরি ব্যাগ এ সময়ের জন্য আদর্শ। খেয়াল রাখবেন, ব্যাগের জিপারও যেন পানিরোধী হয়। কাপড় তৈরি ব্যাগ কিংবা পাটের ব্যাগ এ সময়ে এড়িয়ে চলা উচিত।