অর্থভুবন প্রতিবেদক
মশা মানুষের জন্য সবচেয়ে ঘাতক প্রাণী। প্রতি বছর সাড়ে ৭ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় মশা নামের অতি ক্ষুদ্র কীট। ধর্মীয় কেচ্ছা অনুযায়ী ক্ষমতাদর্পী রাজা নমরুদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল মশা। আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উন্মুক্ত প্রান্তরে হাজির হয়েছিলেন নমরুদ। দর্প ভরে বলেছিলেন- কোথায় আল্লাহর সৈন্যসামন্ত। সে সময় আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে নমরুদ বাহিনীর ওপর। রাজা নমরুদের নাকের মধ্য দিয়ে মশা চলে যায় মাথায় ঘিলুতে। সেখানে কামড় দেওয়া শুরু করে ক্ষুদ্র মশা এবং এক পর্যায়ে মারা যান নমরুদ। ধর্মীয় কেচ্ছা থেকে আসা যাক বাস্তবে। মশা যে কি ভয়ংকর প্রাণী তা যুগে যুগে উপলব্ধি করেছে এ ভূখন্ডের মানুষ। একসময় মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় মারা যেত বিপুল মানুষ। কুইনাইন আবিষ্কার সে অভিশাপের ইতি ঘটিয়েছে। তবে এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু দেশবাসীর কাছে সাক্ষাৎ আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় দেখা যায় ১৬ প্রজাতির মশা। উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের অভয়ারণ্য বলে বিবেচিত। বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনকেফালাইটিস। ২০০০ সালে এ দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় এবং সে বছর প্রায় ৫০০ মানুষ আক্রান্ত হয়। এরপর প্রতি বছরই কমবেশি ডেঙ্গু ছোবল হানছে। তবে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেশবাসী সবচেয়ে বেশি দেখেছে ২০১৯ সালে। ওই বছর সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ১৭৯ জন মারা যান। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৫০০-এর কাছাকাছি। ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গু আতঙ্কে সাধারণ মৌসুমি জ্বর হলেও মানুষ ছুটছে চিকিৎসকের কাছে। মশা নিধনের মাধ্যমে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের কবল থেকে নিরাপদ থাকা যায়। এ ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে।