অর্থভুবন প্রতিবেদক
মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দিয়ে সহজ-সরল মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খবর মাঝেমধ্যেই আসে গণমাধ্যমে। বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে মানুষের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। কখনো সমবায় প্রতিষ্ঠানের নামে, কখনো প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করে আবার মাল্টিপারপাস কম্পানি বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র এই প্রতারণা ব্যবসায় সক্রিয়।
বাংলাদেশে এমএলএম কম্পানির যাত্রা শুরু অনেক আগেই। শুরু থেকেই ‘প্রতারণার ফাঁদে’ পড়ে যায় অনেকে। বাংলাদেশে প্রথম দুটি এমএলএম কম্পানি পণ্য ও কমিশন রেখে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশে ৩৪টির মতো এমএলএম কম্পানি কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে বন্ধ হয়ে গেছে।
এ রকম একটি খবর এসেছে গতকাল কালের কণ্ঠে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যুবক, ডেসটিনির পর এবার এমএলএম ব্যবসার নামে প্রায় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)। এমএলএম কম্পানির এই প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত দেশের লক্ষাধিক যুবক। এমটিএফই দাবি করেছিল, তারা কানাডায় নিবন্ধিত সংস্থা। তারা ব্যবসা করত অ্যাপের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে মোট কতজন এই স্কিমের প্রতারণার শিকার হয়েছে, এর কোনো স্পষ্ট তথ্য কোথাও নেই। কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে—এমন কল্পিত মুনাফার লোভে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বিনিয়োগ করেছিল এই কম্পানিতে। এই কাণ্ডে প্রায় হাজার কোটি টাকা খুইয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কম্পানির লেনদেন বা ট্রেড হতো সপ্তাহে পাঁচ দিন বাংলাদেশি সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা ফিন্যান্সের মাধ্যমে তারা টাকা নিত। পরে স্থানীয় এজেন্টরা সেটি বাইরে পাচার করত। প্রতারকচক্র গ্রাহকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অ্যাপটি পরিচালনা করত।
বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে বসতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষও সচেতন হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।