অর্থভুবন ডেস্ক
মানুষের জীবনের মূলধন সময়। যে ব্যক্তি এ মূলধন যত বেশি ভালো কাজে বিনিয়োগ করতে পারবে সে তত বেশি লাভবান হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি খারাপ কোনো কাজে এ মূলধন অপব্যয় করে তা হলে সে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আমরা অনেকেই মনে করি, আল্লাহ তায়ালা তার লীলাখেলার জন্যই আমাদেরসহ এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাই ‘খাও দাও ফুর্তি করো, দুনিয়াটা মস্ত বড়’ স্লোগান তুলে মন যা চায় তা-ই করার দাবি করে অনেকে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি খেল-তামাশার জন্য সৃষ্টি করিনি।
আমি যদি খেলার উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হতো’ (সুরা আম্বিয়া : ১৬-১৭)। মানুষের জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাদের কাজ-কর্মের পরীক্ষা নেওয়া। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, ‘তিনি ওই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কাজ-কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (সুরা মুলক : ২)। তাই অনর্থক এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট না করে ভালো কাজে আমাদের জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত করা উচিত।
ইসলাম মানুষকে সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। অনর্থক সময় অপচয় করার ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা সফলকাম মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় ঈমানদাররা সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের নামাজে বিনয়ী। আর যারা অনর্থক বিষয় থেকে বিমুখ’ (সুরা মুমিনুন : ১-৩)। যারা এ দুনিয়ার মোহে পড়ে নেক আমল থেকে বিমুখ হবে তাদের আফসোসের কোনো সীমা থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘সেদিন সে বলবে-হায়, এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু নেকি অগ্রে প্রেরণ করতাম!’ (সুরা ফাজর : ২৪)
মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। তার সব আমল আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত ফেরেশতারা লিখিতভাবে সংরক্ষণ করছেন। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকরা। তারা সব জানেন যা তোমরা কর’ (সুরা ইনফিতার : ১০-১২)। এমনকি মানুষের প্রতিটি কথাবার্তাই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা-ই গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী (ফেরেশতা) রয়েছে’ (সুরা কাফ : ১৮)।
কেয়ামতের দিন তার এ লিখিত আমলনামা দিয়ে বলা হবে-‘পাঠ করো তুমি তোমার আমলনামা। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমিই যথেষ্ট’ (সুরা ইসরা : ১৪)। আমলনামায় ছোট-বড় কোনো নেকি ও গুনাহ হতেই খালি হবে না। তখন অপরাধীরা তাদের সব গুনাহ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আফসোস করতে থাকবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে।’
তাতে যা আছে, তার কারণে আপনি অপরাধীদের ভীতসন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে-হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা কাহাফ : ৪৯)
এ দুনিয়ায় কেউ সামান্যতম কোনো নেক আমল করলেও তার পুরস্কার দেওয়া হবে। সুতরাং কোনো নেক আমলকে ছোট মনে করে অবহেলা করা উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালা নিজ রহমতে ছোট কোনো নেক আমলের বদৌলতেও যে কাউকে নাজাত দান করতে পারেন।
পক্ষান্তরে কেউ সামান্যতম কোনো পাপ কাজ করলেও তার জন্য শাস্তি পেতে হবে। তাই কোনো পাপকে ছোট মনে করে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। ছোট পাপের মাধ্যমে অনেক মানুষ বড় পাপের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল : ৭-৮)
কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। শয়তান মানুষের অবসর সময়কে বিভিন্ন অনর্থক কাজে কাটানোর কুপ্ররোচনা দিয়ে তাকে প্রতারিত করে। অবসর সময়ের সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারে না। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি নেয়ামত আছে, যে দুটিতে অধিকাংশ মানুষ প্রবঞ্চিত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি : ৬৪১২)। সুস্থ থাকা অবস্থায় অবসর সময় পেলে অধিকাংশ মানুষ অনর্থক খেল-তামাশায় তা নষ্ট করে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) সময়ের সদ্ব্যবহারের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে আরেকটি হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এক লোককে উপদেশস্বরূপ বলেছেন, ‘পাঁচটি জিনিস আসার আগেই তুমি পাঁচটি জিনিসের সদ্ব্যবহার করো-১. বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে। ২. অসুস্থতা আসার আগে সুস্থতাকে। ৩. দারিদ্র্য অবস্থা আসার আগে সচ্ছলতাকে। ৪. ব্যস্ততা আসার আগে অবসরকে এবং ৫. মৃত্যু আসার আগে জীবনকে’ (বায়হাকি : ৯৭৬৭)। এ হাদিসে সময়ের সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে সময়ের সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলের উম্মত হিসেবে তার নির্দেশ মেনে চলা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক কাজে সময়ের সদ্ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।