অর্থভুবন প্রতিবেদক
ভূমিসংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়ন ও আইন সংশোধনের লক্ষ্যে পৃথক তিনটি বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ শীর্ষক বিলে জমির মিথ্যা দলিল করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ শীর্ষক অপর একটি বিলে কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিক থাকতে পারবেন না এবং ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’ শীর্ষক আরেকটি বিলে কৃষিজমি থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিল তিনটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিলগুলো অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন বিলে ভূমি সম্পর্কিত বেশকিছু অপরাধকে চিহ্নিত করে তা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ কারও কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণসংবলিত কোনো দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- ও অর্থদ-।
বিলে বলা হয়, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- ও অর্থদ-। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই। এ ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকার সূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- ও অর্থদ-। আইনের খসড়া বিলে বলা হয়েছে, সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না। বিলে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরিস্তর কাটলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- ও অর্থদ-।
ভূমি সংস্কার আইন বিলে ব্যক্তিক্ষেত্রে কৃষিজমি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘা বিধান করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনটিকে শিথিল করা হয়েছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে।
‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’ বিলে কোনো ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিধান করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীর নাব্যতা নষ্ট হতে পারে, এমন স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন বিল পাস
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নিলে এবং প্লট বরাদ্দ নিয়ে তা বিক্রি বা ভাড়া দিলে শাস্তির বিধান রেখে সংসদে নতুন আইন পাস করা হয়েছে। গতকাল রাতে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন বিল-২০২২’ নামের বিলটি পাসের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
১৯৫৭ সালের ‘স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন অ্যাক্ট’ স্থগিত করে নতুন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে ওই বিলটি সংসদে আনা হয়। পাস হওয়া ওই বিলে বলা হয়েছে, করপোরেশন থেকে ঋণ বা অন্য কোনো সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। এ ছাড়া করপোরেশন কোনো প্লট বরাদ্দ পেয়ে যদি ওই প্লট বা তার অংশবিশেষ অবৈধভাবে হস্তান্তর, ভাড়া প্রদান বা শিল্পকারখানা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করেন, তা হলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- প্রদান করা হবে।
পারিবারিক আদালত বিল পাস
পারিবারিক আদালত আইনের অধীনে বিচারিক আদালতে হওয়া মামলার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ মর্যাদার অন্যান্য আদালতে আপিলের বিধান রেখে ‘পারিবারিক আদালত বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। তবে সেই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
আগের আইনে বিচারিক আদালতে হওয়া এ সংক্রান্ত মামলার আপিল শুধু জেলা জজের আদালতে করার সুযোগ ছিল। এতে জেলা জজের ওপর মামলা শুনানির চাপ বাড়ছিল। মামলার চাপ কমাতে আইনে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।