Monday, September 16, 2024

এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত করভি রাখসান্দ ‘জাগো ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে কর্মী আর ভলান্টিয়াররা’

বাংলাদেশের জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই পুরষ্কার প্রবর্তনের ৬৫তম বার্ষিকীতে তাকে ‘উদীয়মান নেতা’ হিসেবে এই স্বীকৃতি দিয়েছে র্যামন ম্যাগসেসে কর্তৃপক্ষ। পথশিশুদের পড়ালেখা শেখানোর উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে ঢাকার রায়েরবাজার বস্তিতে একটি ভাড়া রুম এবং মাত্র ১৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে জাগো ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর দ্রুত সামনে এগিয়েছে জাগো। এ পর্যন্ত সারা দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে সরকার-স্বীকৃত ইংরেজি কারিকুলামে শিক্ষা প্রদান করেছে। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করা, সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া ও হাজারো তরুণ-তরুণীকে সমাজ পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করা করভি রাকসান্দের সঙ্গে কথা বলেছে অর্থভুবন প্রজন্ম। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন রুহুল আমিন চৌধুরী

সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনমান উন্নয়নে গত ১৬ বছর ধরে জাগো ফাউন্ডেশন কাজ করে চলেছে। এর আগেও আপনি বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। এবার র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হয়ে কেমন লাগছে?

পুরস্কার পেলে তো ভালোই লাগে। কখনো ভাবিনি এত বড় একটা সম্মাননা আমি পেতে যাচ্ছি। কারণ সম্মাননা পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করিনি। র্যামন ম্যাগসেসে-তে কোনো নমিনেশন থাকে না। আমি নিজেও জানতাম না যে, গত ৫ বছর ধরে তারা আমার ও জাগো ফাউন্ডেশনের কাজ মনিটর করেছে। এর আগে দালাই লামা বা মাদার তেরেসার মতো মানুষ, আমাদের দেশ থেকে স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসরা এ  অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সেই তালিকায় এবার আমার নাম এসেছে। যারা সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন, আমি এটা তাদের উত্সর্গ করছি। 

একটা স্বীকৃতি দায়িত্ববোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আপনার সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।

র্যামন ম্যাগসেসে ভূষিত হওয়ায় আমি বলব যে,  আমার দায়িত্বও আগের থেকে আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। তবে মনে হচ্ছে এ সম্মাননা আমার সামনের অনেকগুলো দরজা খুলে দেবে। যারা আগে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলত তারা হয়ত এখন আমাদের পাশে দাঁড়াবে দেশের জন্য, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য, তরুণদের জন্য কিছু করার আগ্রহ নিয়ে। আর আন্তর্জাতিক এমন অ্যাওয়ার্ড পেলে যারা আগে চিনত না তাদের কাছে আমাদের পরিচয় দিতেও অনেক সহজ হবে। কারণ আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি এই স্বীকৃতিগুলোই তার প্রমাণ। জাগো’র মডেলটা নিয়ে আমরা দেশের ভেতর কাজ করেছি। এখন একই মডেল নিয়ে আমরা দেশের বাইরেও কাজ করার চেষ্টা করব।

দেশের বহু তরুণকে আমরা সামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে দেখি। এদের অনেকে ভালো কাজ করেন, আবার অনেকেরই ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে! এদিক থেকে জাগো ফাউন্ডেশনের কাজ কাজের স্বচ্ছতা সম্পর্কে জানিতে চাই।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বচ্ছতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এই স্বচ্ছতার প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদেরকেও হতে হয়েছে। ২০১১ সালে আমাদের নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠেছিল। আমরা কিন্তু দমে যাইনি, থেমে যাইনি। সময়ের সাথে সাথে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। যারা সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে আপনার সাথে কাজ করে, তারা যখন আপনার সাথে থাকবে তখন যেকোনো কিছু আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আমাদের এখন ২৯টি পলিসি আছে। জাগো’র সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে জাগো’র ভলান্টিয়াররা। আর জাগোর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অর্থ-সহায়তার দিক থেকে বলতে গেলে যেকোনো দাতা সংস্থার প্রকল্পের একটা শেষ থাকে। কিন্তু শিশুদের যখন পড়াব, স্বপ্ন দেখাব, সবমিলিয়ে প্রায় ১৪ বছর লেগে যায়। সহায়তা শুরু করে কোনো দাতা যদি মাঝপথে চলে যায়, তখন বিপদে পড়তে হয়। তাই আমরা ব্যক্তিভিত্তিক দাতাদের সহায়তায় পড়াচ্ছি।

আপনার অনুপ্রেরণা কী?

যখন জাগো শুরু করলাম তখন শিশুরা রিকশাচালক হতে চাইত, কেউ বলত সে ড্রাইভার হবে। সে এখন পাইলট হতে চায় বা উড়োজাহাজ বানাতে চায়। যে তরুণরা একসময় হতাশায় থাকত, তারা এখন কোনো পুরস্কার জিতছে বা সফল হচ্ছে। এসবই আমাদের অনুপ্রেরণা ও উত্সাহের জায়গা। পুরস্কার তো পায় আসলে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন। কিন্তু এর পেছনে আমার ৬০০ সহকর্মী এবং দেশের ৬৪ জেলায় ৫০ হাজার তরুণ রাতদিন কাজ করছে।

১০ বছর আগে কি নিজের আজকের অবস্থান তৈরি হওয়ার কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন? আপনার কাছেসফল হওয়ার মন্ত্রকী, জানতে চাই।

আজকের এই অবস্থানে আসার জন্য যে এই কাজগুলো করব আমরা এটাই জানতাম না! আমরা শুধু শিশুদের ইংরেজি শিক্ষা দিতে চেয়েছি। যেন তাদের জীবনটা সহজ হয়। খুব বেশিকিছু চিন্তা করে আমরা শুরু করিনি। একটা করে সমস্যা এসেছে আর আমরা সমাধান করেছি। যে কারণে মনে হয় আমাদের কাজগুলো স্থায়ী হয়েছে।

এখানে আসলে সফল হওয়ার মন্ত্র বলতে কিছু নেই। বলতে গেলে, সমস্যা সমাধান করতে করতেই জাগো আজ এই অবস্থানে।

 

 

 

spot_imgspot_img

ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায় রাশিয়ার মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার একটি এলাকায় দেশটির মালবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। অনুমোদিত না এমন ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের পর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। বুধবার রেল অপারেটর এ...

ইসরাইলকে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমতীরে তাদের কার্যক্রমে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমতীরে সম্ভবত একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যার কথা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর স্বীকারের...

২০২০ সালের নির্বাচনে হার মানতে আবারো অস্বীকার ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয় মেনে নিতে আবারো অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here