রাজশাহীতে ‘প্রতারকচক্রের’ তৎপরতা
অর্থভুবন ডেস্ক
রাজশাহীতে একটি ‘শক্তিশালী প্রতারকচক্র’ আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী নামের একজন পুলিশ সুপারের (এসপি) বাড়ি দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই এসপি নিজেই। চক্রটি রাজশাহী শহরে তার বাড়ি ভাড়া নিয়ে এখন দখলের অপচেষ্টা করছে। দীর্ঘ সাত বছরে ২৪ লাখ টাকা বাড়ি ভাড়াও পরিশোধ করেনি তারা। সম্প্রতি এসপি আব্দুর রহিম রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলে এসপি (ট্রেনিং) পদে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁওয়ে এসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। টাঙ্গাইলে বদলি হওয়ার আগে তিনি ঢাকায় স্পেশাল ব্রাঞ্চে পুলিশ সুপার ছিলেন। এদিকে থানায় অভিযোগের পর প্রতারক ভাড়াটিয়ারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
অভিযোগে এসপি রহিম তার ভাড়াটিয়া মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনির মনিরুজ্জামান বাবুল এবং সদর হাসপাতাল কলোনি এলাকার বাসিন্দা শবনম মোস্তারি মমিকে আসামি করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে ‘মমতা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন মনিরুজ্জামান বাবুল এবং শবনম মোস্তারি মমি। এ সময় তারা মহানগরীর বালিয়াপুকুর এলাকায় ইনস্টিটিউটের জন্য তার বাড়িটি ভাড়া নেন। ২০১৭ সালের মার্চে তিনি তাদের কাছে ভাড়া চাইলে প্রতারকচক্রের ওই দুই সদস্য কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এর কিছুদিন পর তিনি তার কেয়ারটেকার সোহেল রানাকে ভাড়ার জন্য বাবুল এবং মমির কাছে পাঠান। এ সময় বাবুল কেয়ারটেকার সোহেল রানাকে মারধর করেন এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় সে সময় এসপি রহিম বাবুল এবং মমির নামে বোয়ালিয়া থানায় জিডি করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর বাবুল এবং মমি মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউটের সঙ্গে এসপি রহিমকে সম্পৃক্ত করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে এসপি রহিমকে মমতা ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কার্যনির্বাহী পরিষদের স্বাক্ষর জাল করে এসপি রহিমকে ওই ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হিসাবে অনুমোদন করা হয়। এছাড়া এসপি রহিমের স্বাক্ষরও জাল করা হয় বলে থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউটের রেজুলেশনে তিনি স্বাক্ষর করেননি। এছাড়া এসএম কাজিম উদ্দিন, আব্দুল ওয়াহেদ, ডা. আশরাফুল হকসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। তাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য করেন বাবুল ও তার সহযোগী মমি। এরপর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে এসপি রহিমকে মমতা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পদে অনুমোদন দেওয়া হয়। কার্যনির্বাহী পরিষদে চেয়ারম্যান পদে অনুমোদনের পর তাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান বাবুল ও মমি। এ বিষয়ে এসপি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, নার্সিং কাউন্সিলে দাখিলকৃত মমতা ইনস্টিটিউটের কাগজপত্র থেকে বোঝা গেছে ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। বাবুল এবং মমি আমার বাড়িটি ভাড়া নেন। বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার জন্য আমার এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে আমাকে তারা চেয়ারম্যান করেছেন। আমি তাদের কাছে ২৪ লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া পাব। ভাড়া না দিয়ে তারা আমার বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। এছাড়া তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। বাড়ি ভাড়া, বাড়ির দখল এবং স্বাক্ষর জাল করার প্রতিকার পাওয়ার জন্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।
তিরি আরও বলেন, বাবুল এবং মমির নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চলে একটি শক্তিশালী প্রতারক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ প্রতারকচক্রের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, বাবুল এবং মমির প্রতারণার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে তারা গা ঢাকা দিয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।