নিজস্ব প্রতিবেদক,অর্থভুবন
কার্যতালিকা ঘষামাজা করে মামলার একপক্ষকে সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে মুন্সীগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) শহিদুল ইসলাম এবং জারিকারক মো. পলাশের বিরুদ্ধে। অপরাধ ঢাকতে ‘আমার আদালত’ অনলাইন পোর্টালে থাকা ডিজিটাল কার্যতালিকায়ও কারসাজি করেছেন তারা। মুন্সীগঞ্জ আদালতের আইনজীবীদের অভিযোগ, এটা তো সুনির্দিষ্ট একটি ঘটনা মাত্র। আদালতের এই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম অর্থভুবনকে বলেন, অভিযোগটি গুরুতর। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র বলছেন, আদালতের কার্যতালিকা প্রণয়নের এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট বিচারকের। বেঞ্চ সহকারী সব কিছু প্রস্তুত করলেও এটা চূড়ান্ত করবেন বিচারক। তবে যে কোনো মামলাই ধার্য তারিখ ছাড়া কোনো আদেশ হওয়ার কথা নয় এবং বিচারক এটা কখনো করেনও না। কার্যতালিকায় ঘষামাজা করা মানে এটা জালিয়াতি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এটি কঠিন অপরাধ। প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৫২/২৩ নম্বর পিটিশন মামলাটি শুনানির জন্য ধার্য ছিল। শুনানি শেষে বিচারক পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকায় ‘ফলাফল বা যে তারিখের জন্য মুলতবি রইল’ ঘরে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ লেখা রয়েছে। ‘আমার আদালত’ অনলাইন কার্যতালিকায়ও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর লেখা ছিল। তবে ২৪ আগস্টের কার্যতালিকায় এ মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই।
এ মামলার আইনজীবী নূর হোসেনের অভিযোগ, ধার্য তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর থাকলেও তার আসামিকে গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে ৩১ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ হওয়ায় আমরা রবিবার কোর্টে গিয়ে জানতে পারি ২৪ আগস্ট এ মামলার ধার্য তারিখ ছিল। ওইদিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে কার্যতালিকায় ৩ সেপ্টেম্বরকে লেখা কাটাকাটি করে ২৪ আগস্ট করা হয়েছে। তবে ২৪ আগস্টের কার্যতালিকায় এ মামলার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ মামলার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জানান, অনলাইন কার্যতালিকা সংরক্ষণ করেছি। বিষয়টি তাদের জানালে আমাদের সামনেই অনলাইন কার্যতালিকাও পরিবর্তন করেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাকারিয়া মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ বিষয়ে পেশকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভুল স্বীকার করেন। আরও বলেছেন, এটা করা তার ঠিক হয়নি। আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, এটা চরম জালিয়াতি। শুধু কাগজের কার্যতালিকাই নয়, অনলাইন ভার্সনেও জালিয়াতি করা হয়েছে। আমরা আইনজীবী সমিতি থেকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেশকার শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই লাইন কেটে দেন। অন্যদিকে জারিকারক মো. পলাশ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।