অর্থভুবন ডেস্ক
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ভারতের অবস্থান বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। সাংবাদিক দেবদীপ পুরোহিতের লেখা এই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী মাসে জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে নির্বাচন নিয়ে মূলত দুটি বার্তা দিতে চায় ভারত।
প্রথমত, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগকে তার সব চীন ও ইসলামপন্থি নেতাদের ত্যাগ করে অসাম্প্রদায়িক এবং জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ভারত এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল। ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র শেখ হাসিনার জন্য এই দুই বার্তার কথা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের ইঙ্গিতও দিয়েছে সূত্রটি। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের (ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। একই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও বৈঠক হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন, তার সরকারের অধীনে গত দুটি নির্বাচন (২০১৪ এবং ২০১৮) অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তবুও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে। বিপরীতে নয়াদিল্লি শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কে কখনো কোনো প্রশ্ন তোলেনি বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই সর্বপ্রথম শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট ৯৬ শতাংশের বেশি আসন পেয়েছিল। সুতরাং সাধারণ ধারণা হলো, বাংলাদেশের নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে ভারত ততক্ষণ কোনো চিন্তা করবে না যতক্ষণ ফলাফল শেখ হাসিনার পক্ষে থাকে। কারণ শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লি সর্বদা তার প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে দেখে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় ও মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সূত্রটি : এক. ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোতে চীনপন্থি এবং ইসলামপন্থিদের ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তারা এই পরিস্থিতি অবিলম্বে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। দিল্লি সফরে শেখ হাসিনাকে নিজেদের এই উদ্বেগের কথা জানাতে সম্মত হয়েছে ভারতীয় সংস্থা। দুই. উভয় পক্ষই এ বিষয়ে একমত হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। শেখ হাসিনার ভারত সফরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতীয় সংস্থা। তিন. ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে, কোনো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শর্ত দেওয়া হবে না, যা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের প্রধান দাবি। কারণ বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে এমন কোনো বিধান নেই। চার. উভয় পক্ষ সম্পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে, হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি এবং ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে। পাঁচ. ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালে সেটা হবে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তনের একটি এজেন্ডা, যা বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এতে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি বৃদ্ধি পাবে। ছয়. ভারতীয় পক্ষ জোরালোভাবে মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন এবং ভারত জামায়াতকে একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন বলে মনে করে। সাত. নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। নয়াদিল্লি মনে করে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে আদর্শগতভাবে ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।