সবকিছুর দাম বাড়ছে, মানুষের হাতের টাকা কমছে। বেশি দামে পণ্য কিনে সাধারণ মানুষ কী করে চলবে? টাকার মান কমে যাওয়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, করোনা মহামারি আর মন্দ ব্যবসায় চাকরি চলে যাওয়া, বেতন কমে যাওয়ার ধাক্কা পড়েছে মধ্যবিত্ত আর গরিবের ওপর। সবকিছুর দামই এখন আকাশছোঁয়া। তাহলে গরিবের জীবন চলবে কী করে? সামনে বিশ্ব মন্দার কথা শুনছি। চাহিদার চেয়ে পণ্যের সরবরাহ কমে যাচ্ছে দিনদিন। সবকিছুর দাম যখন হুহু করে বাড়ছে, তখন সামনের দিন কেমন যাবে, বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। সামনের দুর্দিনের ভাবনাটা এখনই ভাবতে হবে। সম্ভাব্য মন্দাবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণের প্রধান উপায় হলো কৃষিজাত খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি। কৃষি উৎপাদন বাড়ানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে হবে। সেগুলো মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে। অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। মোট কথা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়াতে হবে। তখন যতই মন্দা আসুক, কৃষি খাতই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে। বিশ্বমন্দা শুরু হলে আরও অনেকে চাকরি হারাবেন। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও চলে আসতে হবে অনেক প্রবাসীকে। ঝুঁকির কথা ভেবে বুদ্ধিমান অনেকেই এখন শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছেন। তাদের কেউ অনাবাদি জমি কৃষির আওতায় আনছেন, পুকুরে মাছ চাষ করছেন, কেউ আবার হাঁস-মুরগির খামার করছেন। মানুষের কর্মসংস্থান করতে না পারলে গ্রামীণসহ সামগ্রিক অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ভবিষ্যতে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্দিষ্ট হারে খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজন। কৃষি ব্যবসা ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পই গ্রামীণ কর্মসংস্থানের মূল উৎসে পরিণত হবে। মাছ, দুগ্ধ, শস্য, পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতের মাধ্যমে চাকরি বা উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে এখনই। এ ব্যাপারেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রচার-প্রচারণাসহ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বস্ত্রসহ অনেক শিল্পে সংকট চলছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ কম, তাই উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্প-কারখানা। কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। বিদেশের শ্রমবাজারও মন্দা। এতে মানুষের আয় কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের তিন মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
মানুষ নানা সংকটে আছে। সাধারণ মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হচ্ছে। প্রতিবছরই দেশের শ্রমবাজারে ঢোকার জন্য যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। সরকারি হিসাবেই বছরে এই নতুন মুখের সংখ্যা ১৫ লাখ। অথচ কাজের অভাব মারাত্মক। দেশে বেকারত্বের চাপ খুব একটা কমেনি। মোদ্দা কথা, কাজই এখন মানুষের বেঁচে থাকার উপায়। কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। সহজেই শস্য ফলে এদেশে। কৃষিজমি কোনোভাবেই অনাবাদি রাখা যাবে না। যাদের জমি আছে, যতটুকু সম্ভব কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়লে চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংসের দাম কমে আসবে। কাজের ক্ষেত্র বা পরিধি যত প্রসারিত হবে, ততই এই দুঃসহ চাপ কমবে।
মীর আব্দুল আলীম : চেয়ারপারসন (পরিবেশ), লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল (৩১৫ এ-১)