অর্থভুবন ডেস্ক
মেহমানদারি মানুষে-মানুষে বন্ধন দৃঢ় করে। মেহমানদারি সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। এটি কল্যাণ ও মহত্ত্বের পরিচায়ক। হজরত ইবরাহিম (আ.) সর্বপ্রথম পৃথিবীতে মেহমানদারির প্রথা চালু করেছেন। ইসলামে অতিথিসেবার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মেহমানদারির সঙ্গে ইমানদারির বিশেষ সম্পর্ক আছে। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১৮
নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মেহমানদারির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নবী হওয়ার আগে থেকেই তিনি অতিথিসেবায় সচেষ্ট ছিলেন। অনেক সময় অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে অনাহারে থাকতে হয়েছে। নিজ ঘরে মেহমানদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে তিনি মেহমানদের কোনো ধনী সাহাবির বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন।
হাদিসে এমনই একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সাহাবির মেহমানদারি দেখে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা হেসেছেন অর্থাৎ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে এ হাদিসের বর্ণনা আছে।
নবী কারিম (সা.)-এর কাছে একজন লোক এলেন। তিনি (খাদ্যের জন্য) তার স্ত্রীদের কাছে সংবাদ পাঠালে তারা বলেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নেই।
নবী কারিম (সা.) বলেন, কে তার মেহমানদারি করবে?
আনসারদের একজন তখন বললেন, আমি। তিনি তাকে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের রাতের খাবার ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই।’
আনসার বললেন, ‘তুমি খাবার তৈরি করো আর বাতি ঠিক করো। বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে, তখন ভুলিয়ে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ো।
আনসারের স্ত্রী খাবার তৈরি করলেন, বাতি ঠিকঠাক করলেন, আর তার বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। এরপর উঠে বাতি ঠিক করার ছুতায় সেটি নিভিয়ে দিলেন। এমন ভাব দেখালেন, যেন তারা মেহমানের সঙ্গে আহার করছেন। অথচ রাতে তারা উপোসই থাকলেন।
ভোর হলে ওই আনসার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন। নবী কারিম (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপে হেসেছেন এবং আয়াত নাজিল করেছেন, ‘মুহাজিরদের আসার আগে এ শহরের যে অধিবাসীরা বিশ্বাস করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে, তার জন্য তারা (তাদের) মনে মনে ঈর্ষা করে না, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা মুহাজিরদের নিজেদের ওপরে জায়গা দেয়। যারা কার্পণ্য থেকে নিজেদের মুক্ত করেছে, তারাই সফলকাম। যারা ওদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও বিশ্বাসে যারা এগিয়ে, আমাদের সেই ভাইদের ক্ষমা করো, আর বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়াপরবশ, পরম দয়ালু।’ -সুরা হাশর : ৯-১০, সহিহ বোখারি : ৩৭৯৮