অর্থভুবন ডেস্ক
হোটেল ঘিরে ত্রি-স্তরীয় নিরাপত্তা। ১৪ তলা ভবনের ভেতরে ৩০০ মার্কিন কমান্ডো, প্রতি তলায় পাহারা * ৫০-৬০ গাড়ির সবচেয়ে বড় কনভয়
দিল্লির পালাম এয়ার ফোর্স বিমানবন্দর। ভারতের ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৭.২০ মিনিট প্রায়। বিমানবন্দরের ভেতর-বাইরে চারদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। নিরাপত্তারক্ষীরা সবাই তটস্থ। থমথমে অবস্থা। পিনপতন সেই নীরবতার মাঝেই শুক্রবার পুরো বিমানবন্দর কাঁপিয়ে রানওয়ের মাটি ছুঁল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরে (৮০) বিমান ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’। বিশ্বমোড়ল বলে কথা-নিরাপত্তায় চুল পরিমাণ ঘাটতি রাখেনি দিল্লি। বলা যায় জি-২০ সম্মেলনে আগত রাজা-মহারাজাদের সবার চেয়ে শতগুণে বেশি নিরাপত্তা বাইডেনের। ভারতীয় ব্যবস্থা তো আছেই, প্রথা মোতাবেক নিজের সফরসঙ্গী ‘দ্য বিস্ট’ও এসেছে আরেক বিমানে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরাপদ গাড়ি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিরাপত্তায় আসলেই ‘এলাহি কাণ্ডই’ করেছে ভারত। রাস্তায় রাস্তায় নিরাপত্তা কর্ডন। আকাশে ক্রমাগত চক্কর দিচ্ছে বিমানবাহিনীর ফাইটার বিমান। জায়গায় জায়গায় বসানো অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমে সর্বক্ষণ চালছে তদারকি। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে চার পাশের উঁচু উঁচু ভবনগুলোতে স্নাইপার সেনা। যখন যেখানে যাবেন সামনে-পেছনে ৫৫-৬০টি বুলেটপ্রুফ গাড়ির বহর। আর সবার মাঝে থাকবে ‘দ্য বিস্ট’। ঠিক পেছনের গাড়িগুলোতে নিরাপত্তারক্ষী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। আরও থাকবেন চিকিৎসক এবং অন্য প্রতিনিধিরা। রীতিমতো ত্রি-স্তরীয় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে বাইডেনের প্রতিটি পদক্ষেপ। ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস নাও, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া।
ক্যাডিলাক ‘দ্য বিস্ট’। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুরক্ষা প্রদানকারী গাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টকে নিরাপত্তা দেওয়াই বুলেট প্রতিরোধী এই গাড়ির দায়িত্ব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার-৩তে বিমানটি আনা হয়েছে। বিলাসবহুল গাড়িটি আটটি বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা বিদ্যমান। এটির ওজন প্রায় ২,০০০ পাউন্ড। গাড়ির মূল অংশ (বডি) তৈরি হয়েছে স্টিল, টাইটেনিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। কাঠামোটি পাঁচ ইঞ্চি মোটা এবং অত্যন্ত শক্ত। সম্পূর্ণ যানটি বোমা এবং মাইন প্রতিরোধী। সামরিক গ্রেডে বানানো দরজার কবচটি ২০ সেমি পুরু। ক্যাডিলাক বাহনটির জানালার পাঁচটি স্তর রয়েছে। এটি কাচ এবং পলিকার্বনেট দিয়ে তৈরি। শুধু চালকের পাশের জানালা ছাড়া আর কোনো জানালার কাচ নামানোর নিয়ম নেই। সেই কাচও মাত্র তিন ইঞ্চি পর্যন্ত নামানো যায়। সামরিক গ্রেডে বানানো দরজার কবজাটি ২০ সেমি পুরু। চাকাটি কোনো কারণে ছিদ্র হলে রান-ফ্ল্যাট টায়ারের শক্ত আবলম্বন থাকে। জ্বালানি ট্যাঙ্কটি বুলেট এবং বিস্ফোরক প্রতিরোধী। প্রতিরোধক ফোম দিয়ে পরিপূর্ণ ট্যাঙ্কটি। সরাসরি হামলা হলেও এতে কোনো বিস্ফোরণ অসম্ভব। বাড়তি সুরক্ষায় পাম্প-অ্যাকশন শর্টগান এবং টিয়ার গ্যাস কামানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ‘দ্য বিস্টে’ অত্যাধুনিক সেন্সর লাগানো রয়েছে। কোনো রকম নিউক্লিয়ার, কেমিক্যাল বা বায়োলজিক্যাল হামলা হওয়ার আগেই তা বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই সেন্সরের। জরুরি অবস্থার কথা মাথায় রেখে রয়েছে অগ্নিনির্বাপক গিয়ার, অক্সিজেন ট্যাঙ্ক এবং প্রেসিডেন্টের গ্রুপের রক্তের ব্যাগ। প্রেসিডেন্টের ক্যাডিলাক গাড়িটিতে চাপলেই তার প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর রাখে পেন্টাগন। এরজন্য পেছনের আসনে রয়েছে স্যাটেলাইট ফোন। এর সাহায্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিশেষ সুরক্ষামূলক ভিন্নধর্মী গাড়িতে সাতজন লোককে বসাতে পারে। দাম ১.৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরস (জিএম)। এ তো গেল পথের প্যাচাল-বাইডেনের থাকার হোটেলে আইটিসি মৌর্য শেরাটনেও থাকবে ‘থ্রি লেয়ার সিকিউরিটি সিস্টেম’। বাইরের স্তরে থাকবেন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। দ্বিতীয় স্তরে দেখা মিলবে ভারতের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের কমান্ডারদের। সবচেয়ে ভেতরের বৃত্তে অর্থাৎ প্রথম কাতারে থাকবে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টের সদস্যরা। ৪০০ কক্ষের ১৪ তলা এই হোটেলের সবকটি তলায় পাহারায় থাকবেন মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের ৩০০ কমান্ডো। ওঠানামায় ব্যবহৃত বিশেষ লিফটটি শুধু তার জন্যই!