Tuesday, January 14, 2025

শরৎ তোমার অমল আলোয়

অর্থভুবন ডেস্ক

এবার শ্রাবণের শেষে টানা বৃষ্টি হলো। ভাবগতিকে মনে হচ্ছে এর রেশ সহজে যাচ্ছে না। এখন আকাশের দিকে তাকালে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা মনে পড়ে যায়, ‘এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে।’ তেমন শিমুল তুলার মতো শরতের মেঘমালা বিশেষ চোখে পড়ছে না। তবু দিনগণনার নিয়ম মেনে শরৎ এল। বৃষ্টির রেশ কাটলে নিবিড় নীলিমায় সাদা দুধেল গাভির পালের মতো চরে বেড়ানো মেঘপুঞ্জের সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে।

এই সদাব্যস্ত মহানগরীতে দৃশ্যমান হবে শরৎকালের এটুকু চিহ্নই। নাগরিক দৃষ্টির সীমানায় আকাশ সীমাহীন নয়। অগুনতি বহুতল দালানকোঠার আড়ালে থাকা আকাশের পরিধি বর্গফুটে মাপা ফ্ল্যাটবাড়ির আয়তনের মতোই সীমিত।

সেখানে ময়ূরকণ্ঠী নীলের পটভূমিতে অভ্রের মতো মেঘের ভেসে যাওয়ার একটুকরা ছবি শরতের আগমন জানান দিলেও তাতে মনভরানো শোভা পুরোপুরি থাকে না। মেঘবিলাসের সময়ও তো হাতে থাকা চাই। চব্বিশ রকমের কাজ নিয়ে জীবিকার জাঁতায় পিষ্ট আমজনতার জীবনে মেঘবিলাসের ফুরসত কোথায়?

সাদা মেঘের স্তুতি কাব্যে-সাহিত্যে যা-ই থাকুক না কেন, মনে শরতের স্থায়ী ছবি হয়ে আছে নদীতীরে মৃদুমন্দ হাওয়ায় মাথা দোলানো কাশফুল। সত্যজিৎ রায়ের ছবির কল্যাণে চিরজীবী। কাশফুলের সঙ্গে দূরদিগন্তে সাদা মেঘের ভেলার আভাস থাকলে তো কথাই নেই।

ঢাকায় অবশ্য কয়েক বছর ধরে কাশবনের সান্নিধ্য লাভের এক বিরল সুযোগ তৈরি হয়েছে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায়। বেলা শেষের নরম আলোর আভায় হালকা হাওয়ার ঝাপটায় সফেদ ফুলের মৃদু আলোড়ন চোখ জুড়িয়ে দেয়। বহু নগরবাসী সেখানে বেড়াতে যান। এখন তো টিকটক আর ফেসবুকের জমানা। মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধরা সেই শুভ্র সৌন্দর্য ভেসে বেড়ায় অন্তর্জালে।

ঢাকার নদ-নদী আর বিল-ঝিল গ্রাস করছে ভূমিদস্যুরা। আগের দিনের টোলের বুড়ো পণ্ডিতমশাইয়ের মতো সরকার বাহাদুর মাঝেমধ্যে তাদের প্রতি গর্জন দিচ্ছে বটে, তবে দস্যু মহাশয়েরা ডানপিটে শিষ্যের মতো তাতে থোড়াই কেয়ার করছে। বিল-ঝিল তো গেছেই, নদ-নদীও মরো-মরো। দিয়াবাড়ির এই কাশবন জন্মেছে জলপ্রবাহের নিচু জমিতে বালু ভরাট করে প্লট তৈরি করায়। একদা দূরের কোনো নদী থেকে তুলে আনা হয়েছিলে এই বালু। তার সঙ্গে মিশে ছিল কাশফুলের বীজ। নদীর প্রবাহ না পেলেও নিরুপায় প্রকৃতি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিকূল প্রতিবেশের সঙ্গে লড়াই করে একসময় বংশবিস্তার করেছে। সৃষ্টি হয়েছে কাশবনের এই শহুরে সংস্করণ।

শুধু কাশফুল হলেই চলবে না, শিউলি না হলে তো শরৎ বড়ই খাপছাড়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য দুটি নামই ডেকেছেন, ‌‌‘ওলো শেফালি, ওলো শেফালি,/ আমার সবুজ ছায়ার প্রদোষে তুই জ্বালিস দীপালি।’ আবার বলেছেন, ‘শিউলিতলার পাশে পাশে/ ঝরা ফুলের রাশে রাশে/ শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে…।’

এ শহরে শিউলি স্বল্প, তবে দুর্লভ নয়। কোনো কোনো বাড়ির আশপাশে, হাল আমলের ছাদবাগানে বা অফিসের প্রাঙ্গণে শিউলির দেখা মেলে। চলতি পথে দূরাগত হাওয়ায় তার চকিত সৌরভের ঝাপটায় অনেকের মনে ফেলে আসা দিনের সুপ্ত স্মৃতি জেগে ওঠে। যে অল্প কিছু ফুলের সঙ্গে আমাদের ফুল কুড়ানোর স্মৃতি মিশে আছে, শিউলি তাদের অন্যতম।

আর থাকল শাপলা। বিল-ঝিলের কাকচক্ষু পানিতে ফোটা জাতীয় ফুলটির মনোহর রূপ রাজধানীতে দুর্লভ। বিকল্প হিসেবে কাঁচাবাজারে শাপলার দেখা মেলে সবজি রূপে। চিত্তের নয়, উদরের ক্ষুধা মেটাতে তার আবির্ভাব। শাপলা আসে প্রধানত মুন্সিগঞ্জের প্রায় ২৬০ বর্গমাইল আয়তনের বিখ্যাত আড়িয়ল বিল থেকে। শরতে শাপলা ফোটা এ বিলের সৌন্দর্য অপরূপ।

এসব নিয়েই আমাদের শরৎকাল। এরই মধ্যে একসময় ঢাকে পড়ে পূজার কাঠি। অসুরবিনাশী দশভুজা দেবীর আগমনীতে মণ্ডপগুলো উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শঙ্খধ্বনি, ঢাকঢোল, ধূপের ধোঁয়া আর আরতি নৃত্যের ছন্দে।

শরতের সৌন্দর্য তার কোমল শুভ্রতায়। সাদা মেঘ, সাদা ফুল, দিনের অমল আলো, রাতের শিশিরকণা, শরৎশশীর অমল-ধবল জ্যোৎস্না—সব মিলিয়ে পরম স্নিগ্ধতায় প্রকৃতি যেন পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠে। মানুষের মনে ও জীবনযাপনে গভীরভাবে রেখাপাত করে যায়।

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here