অর্থভুবন ডেস্ক
সারা দিনে চলার পথে, কাজকর্মে কত মানুষের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। একজন মুসলিম হিসেবে অন্য ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ কেমন হওয়া উচিত, তা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন, একজন মুসলিম অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে। শুধু তা-ই নয়, এটিকে তিনি সদকা হিসেবে গণ্য করেছেন।
সদকা মানে দান, যার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আখিরাতে বান্দাকে পুরস্কৃত করবেন। এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো, অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ জামে তিরমিজি : ১৯৭০
নবী করিম (সা.) সর্বদা সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। কারও সঙ্গে দেখা হলে কমপক্ষে হাসিমুখে তাকে শুভেচ্ছা জানাতেন। হজরত কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি হজরত জারির (রা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই আমাকে দেখেছেন, আমার সামনে মুচকি হাসি দিয়েছেন।’ আদাবুল মুফরাদ : ২৪৯
হাসির তিনটি স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো এক. মৃদু বা মুচকি হাসি। এ হাসিতে দাঁতও দেখা যায় না, শব্দও হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা এভাবে হাসতেন। এ হাসিই উম্মতের জন্য সুন্নত। দুই. যে হাসিতে দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না। এভাবে হাসা জায়েজ আছে, তবে না হাসাই উত্তম। তিন. অট্টহাসি। এটি নির্লজ্জ ও অহংকারী লোকদের হাসি এবং এতে চেহারার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। ইসলামে অট্টহাসি নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, এতে অন্তর মরে যায়। তা ছাড়া নামাজের ভেতর উচ্চস্বরে হাসলে অজু ও নামাজ উভয়টিই নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং মুচকি হাসি ছাড়া বাকি দুই প্রকার হাসি বর্জন করা উচিত।
মুচকি হেসে কথা বলা ইবাদত। এভাবে কথা বলার দ্বারা মুমিন খুশি হয়, আল্লাহতায়ালাও খুশি হন। আর এর বিনিময়ে তিনি বান্দাকে কিয়ামতের দিনও খুশি করবেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে পছন্দ করে (এর বিনিময়ে) কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে খুশি করবেন।’ মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ১৩৭২১
সুবহানাল্লাহ! ছোট্ট একটি আমল। কোনো ধরনের কষ্টই নেই তাতে। অথচ কত বড় ফজিলত দেখুন! সাধারণ একটি আমলের কত বড় পুরস্কার! একটু সদিচ্ছা থাকলেই আমরা এ আমলটির প্রতি যত্নশীল হতে পারি। তা ছাড়া এভাবে হাসিমুখে কথা বলার নানা ফায়দাও রয়েছে। এভাবে কথা বললে শত্রুও গলে যায়। পরস্পর থেকে দূর হয়ে যায় হিংসা ও বিভেদের দেয়াল। হৃদয় থেকেও দূর হয় অহংকার ও আত্মম্ভরিতা। একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে খুব দ্রুত।
মোটকথা, হাসিমুখে কথা বলা মুমিনের উত্তম চরিত্রেরই অংশ। তাই আসুন, কথা বলার সময় সর্বদা মুচকি হেসে কথা বলি। ছোট্ট আমলগুলোর ব্যাপারে হই আরও বেশি যতœশীল।