অর্থভুবন প্রতিবেদক
গত ২ সেপ্টেম্বর শনিবারের ঘটনা। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা প্রেস ক্লাবের হলরুম ততক্ষণে কানায় কানায় পূর্ণ। সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু উপজেলার ১৫ জন সংগ্রামী অসহায় নারী। জীবনসংগ্রামের লড়াকু এই নারীরা আজ এখানে জমায়েত হয়েছেন পরিবর্তনের আশায়।
বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে কালকিনি প্রেস ক্লাবের হলরুমে ৯০ দিনব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে।
১৩ বছর আগে কালকিনি পৌর এলাকার ঠেঙ্গামারা গ্রামের রেনু খানমকে ছেড়ে তাঁর স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন রেনু। মানুষের বাসায় কাজ করে সংসারের হাল ধরেন।
খুব অল্প বয়সেই স্বামীহারা হন দক্ষিণ কৃষ্ণনগর গ্রামের ফিরোজা বেগম। এক মেয়ে নিয়ে তাঁর দুঃখের শেষ নেই। ফিরোজা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে আমি অনেক কষ্ট করে মানুষ করতেছি। এই মুহূর্তে আমার পাশে দাঁড়াল বসুন্ধরা গ্রুপ। সেলাই প্রশিক্ষণের কথা শুনে মনে হয় নিজের হাতে চাঁদ পেয়েছি। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ। এবার মেয়েকে নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারব।’
এনায়েতনগর ইউনিয়নের সুরাইয়া আক্তারের বাবা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। সে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী। সংসারে তিন বোন, এক ভাই ও মা। পরিবারের বড় হওয়ায় তাকেই হাল ধরতে হয়। কোনো রকম টিউশন করিয়ে নিজের খরচ এবং পরিবার চালায় সুরাইয়া। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে বেশ আনন্দিত সে। সুরাইয়া বলে, ‘পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আশায় দিন গুনছিলাম। খুবই কষ্ট হচ্ছিল চলতে। প্রশিক্ষণ শেষে একটি মেশিন পেলে সব চিন্তা দূর হবে। কষ্ট থাকবে না। ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারব। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পথ তৈরি করে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ।
বাঁশগারী ইউনিয়নের ভাটবালি গ্রামের খাদিজা আক্তার সুমা। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। এত বড় সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সুমার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুমা তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ঠিকমতো খাওয়াতে না পেরে কালকিনি শহরে এক বাসায় সুমাকে কাজের জন্য পাঠিয়ে দেন মা। অনেক কান্নাকাটি করেছিল মেয়েটি। কয়েক দিন খুব মন খারাপও ছিল। কিন্তু সেই বাসার দুজন মানুষই খুব ভালো থাকার কারণে তার আর কোনো কষ্ট রইল না। তারা সুমাকে লেখাপড়া করার সুযোগ দিয়েছে। এই বছর সুমা এসএসসি পাস করেছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হয়ে সুমা বলে, ‘আমার ইচ্ছা ছিল স্বাবলম্বী হব। যখনই শুনলাম বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ দেবে, দেরি না করে ভর্তি হয়েছি। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। আল্লাহর রহমতে বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়াল। আমি সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হব, ইনশাআল্লাহ। আমার স্বপ্নপূরণের সারথি বসুন্ধরা গ্রুপ।’
কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেব যে মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সেটি সত্যি অনেক প্রশংসনীয়। আমরা সরকারের প্রতিনিধি হয়ে যারা কাজ করি, তারাও অনেক সময় এত বড় উদ্যোগ নিতে পারি না। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকে। বসুন্ধরা গ্রুপ শুভসংঘের মাধ্যমে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার তুলনা হয় না। বসুন্ধরা গ্রুপকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও ধন্যবাদ জানাই।