অর্থভুবন ডেস্ক
মানসিকভাবে সুস্থ থাকার বার্তা পেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী। কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, মানসিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক যন্ত্রণায় থাকলে অবশ্যই তা পরিবার ও কাছের মানুষদের জানাতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে চিকিৎসা। মানসিক সমস্যা লুকানোর সুযোগ নেই।
ইউনিমেড ইউনিহেলথ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় এবং প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ আয়োজিত কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ প্রদান করা হয়। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে কর্মশালায় আলোচনা করেন এনাম মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন এবং সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট সাইকোথেরাপিস্ট মাহমুদা মহসিনা।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তরুণদের ভূমিকা ও করণীয় কী? মানসিক স্বাস্থ্য বনাম মানসিক রোগ ধরন, আত্মহত্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার, কীভাবে মনের যত্ন নেওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করেন ফারুক হোসেন। আলোচনায় তিনি মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়ার ওপর জোর দেন।
অপর আলোচক মাহমুদা মহসিনা বুশরা বলেন, ‘ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তরুণ-তরুণীদের অনেকেরই মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থেকে লাভ নেই, আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি কিছু পারি না, সবাই কেনো আমাকে দোষ দেয়, এই মানুষগুলোর সঙ্গে আমার পরিচয় না হলে ভালো হতো ইত্যাদি। এগুলো থেকে মানসিক ডিজঅর্ডার হয়। অথচ আমাদের বেঁচে থাকার নামই জীবন। যারা কাঁদতে পারে না, রাগ করতে পারে না, তারা বেশি মানসিক সমস্যায় ভোগে। কারণ, এগুলো সব অনুভূতি। এ অনুভূতি প্রকাশ না করতে পারলে মানুষ হতাশায় পড়ে যায়। এ হতাশা কাটাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে বন্ধুরা। তাই সবারই অন্তত এক–দুজন বন্ধু থাকা জরুরি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, বন্ধুসভা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ এবং বর্তমান সভাপতি হামিদা জান্নাত।
গতকাল সকাল ১০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শুরু হওয়া কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সেলিং সেন্টারের উপদেষ্টা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে বর্তমান কাজের দক্ষতা ও সাফল্য অর্জন ভূমিকা রাখে। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বর্তমান কাজে নিজেকে শতভাগ নিয়োজিত রাখতে হবে। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে মানসিক প্রশান্তি দেয় এমন কিছু কাজ করা প্রয়োজন। তা হতে পারে লেখালেখি, প্রকৃতি দেখা, গণিত সমাধান ইত্যাদি।
মাহবুবা সুলতানা বলেন, ‘মানসিক দুচিন্তা থেকে দূরে থাকার অন্যতম কৌশল হচ্ছে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। মন খারাপ হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কখনো মাদক হতে পারে না। এটি ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হয়। মাদকের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে, যা আমাদের নষ্ট করে দেয়। মাদকের মতোই মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও আসক্তি থাকা যাবে না। এ জন্য নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।’
ইউনিমেড ইউনিহেলথের চিকিৎসা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ওবায়দুর রেজা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। ব্যর্থতার জন্য কখনো মানসিক অজুহাত না দেওয়া। মানসিক সমস্যা হলে প্রিয়জনদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিতে হবে।