অর্থভুবন ডেস্ক
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. তন্ময় ইসলাম। ৪১তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে মেধাক্রমে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন।
বিসিএস পরীক্ষা একজন পরীক্ষার্থীর সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। আমার বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি স্কুলজীবন থেকেই শুরু হয়েছিল। আমি দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করি। অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি ও মাধ্যমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এরপর ২০১৪ সালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই সিজিপিএর প্রতি সচেতন ছিলাম। তবে শুধু একাডেমিক কারিকুলামে নিজেকে আবদ্ধ রাখিনি। বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যেমন শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসার জন্য আর্থিক ব্যবস্থা, শিক্ষার সহায়তা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সে অংশ নিই। রুয়েটের অ্যাস্ট্রোনমি ও সায়েন্স সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। বিভিন্ন স্কুল ক্যাম্প, স্কাই অবজারভেশন ক্যাম্প, বিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণ করি। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আগ্রহ থেকে সোলার ইনভার্টার নিয়ে গবেষণা করি। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে এ বিষয়ে আমার পেপার প্রকাশ পায়। অবশেষে রুয়েট ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ডিপার্টমেন্ট থেকে সিজিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে অষ্টম স্থান অর্জন করে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর যোগদান করি বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বাউয়েট) প্রভাষক হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা আমার জীবনের সোনালি একটি সময়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছি।
কিন্তু আমার পরিবার, বিশেষ করে মা-বাবার স্বপ্ন ছিল যেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করি। বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ, প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া ও কাজের বৈচিত্র্য আমাকে বিসিএসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। তা ছাড়া সিভিল সার্ভিসে থেকে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তাই বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করি। নতুন চাকরিতে যোগদানের কিছু সময় পরই ৪০তম বিসিএসে অংশ নিই। পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় কিছু বিষয়ে দুর্বলতা অনুভব করি। তবে ভাইভায় সহশিক্ষা কার্যক্রম, একাডেমিক রেজাল্ট, উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হওয়াতে বোর্ড অনেক সন্তুষ্ট ছিল বলে মনে হয়েছে। ৪০তম বিসিএসে আল্লাহর রহমতে বিসিএস তথ্য ক্যাডারে সহকারী বেতার প্রকৌশলী পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। যেহেতু প্রথম থেকেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করার বাসনা ছিল, তাই ৪১তম বিসিএসে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে থাকি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন বই পড়া, ইংরেজি ও গণিতে দক্ষতা বৃদ্ধি পরবর্তীকালে বিসিএসে কাজে লেগেছে। ৪১তম বিসিএসের সময় নিজের দুর্বলতাগুলো কাটানোর জন্য বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকি।
প্রচুর অনুশীলন করি অনুবাদ, বিজ্ঞান, ইংরেজি। দৈনিক পত্রিকার এডিটোরিয়াল নিয়মিত অনুবাদ করি। বিসিএসের প্রস্তুতিতে বেশ কিছু সরকারি চাকরি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় টিকে যাই ও বিডিবিএলে সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগপত্র পাই। যদিও পরে যোগ দিইনি। ৪১তম বিসিএসে বেশ ভালো পরীক্ষা দিই। পর্যাপ্ত তথ্য, ছক, মানচিত্র, উক্তি লেখার মান বৃদ্ধি করে। ভাইভা প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি’ বইয়ের খুঁটিনাটি সব পড়ি। বইটি আমাকে ভাইভা প্রস্তুতি নিতে বেশ সহায়তা করেছে। আমার ভাইভা প্রায় পুরোটাই ইংরেজিতে হয়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। অবশেষে ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। বিসিএস পরিশ্রমের পাশাপাশি ধৈর্যের পরীক্ষা। এই দীর্ঘ পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য পরিবারের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমি ভাগ্যবান আমার প্রতি পরিবারের অবিচল আস্থার জন্য। এই দীর্ঘ যাত্রায় আমার স্ত্রী অত্যন্ত কষ্ট করেছেন। তিনিও বর্তমানে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে কর্মরত। আগামী দিনগুলোতে মেধা ও শ্রম দিয়ে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।