অর্থভুবন ডেস্ক
প্যাপিরাস থেকে পাওয়া একটি গল্প অনুসারে ফারাও একবার জানতে পারলেন তাঁর হারেমের কিছু নারীর সঙ্গে তাঁরই দরবারের কিছু পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সময়ের রীতি অনুযায়ী এটাই স্বাভাবিক যে তিনি তাদের নিকেশ করে দেবেন। কিন্তু তা না করে তিনি একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ডাকলেন এবং দায়িত্ব দিলেন যা শুনেছেন, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে। তাঁর বক্তব্য ছিল, সত্যটা জানা দরকার, যাতে তিনি ন্যায়বিচার করতে পারেন।
এই আচরণ আমার কাছে সাম্রাজ্য বিস্তার বা পিরামিড নির্মাণের চেয়েও মহৎ। একটি সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব যে তার ধনসম্পদে নয়, এই আচরণের মাধ্যমে অনেক স্পষ্টভাবে তা উঠে আসে। তবে সেই সভ্যতা আজ আর নেই, এসব অতীতের গল্পমাত্র। এমন দিন আসবে যে এই প্রখ্যাত পিরামিডও আর থাকবে না। কিন্তু মানবজাতির বিবেক যত দিন জাগ্রত থাকবে, যত দিন তার মন চিন্তাশীল থাকবে, সত্য এবং ন্যায় থেকে যাবে তত দিন।
ইসলামিক সভ্যতার যে বাণী সেই স্বাধীনতা, সাম্য এবং ক্ষমার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে তার খোদার যোগসূত্র সাধনের কথাও আজ আমি বলব না। নবীর মহত্ত্বের কথাও নয়। আপনাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা তাঁকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে মনে করেন।
আমি এই সভ্যতাকে আজ সামনে নিয়ে আসতে চাই এক নাটকীয় পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ করে। যে সারসংক্ষেপে ইসলামিক সভ্যতার চিহ্ন রয়ে গেছে। বাইজেন্টাইনের সঙ্গে একটি যুদ্ধ বিজয়ী হওয়ার পর এই সভ্যতা যুদ্ধবন্দিদের ফিরিয়ে দিয়েছিল প্রাচীন গ্রিক দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র এবং গণিতশাস্ত্রের বইয়ের বিনিময়ে। এটাই জ্ঞানপিপাসু মানবাত্মার মূল্যবান পরিচয়।
আমার ভাগ্য এভাবেই গড়ে উঠেছে এই দুটি সভ্যতার কোলে, তাদের দুধ খেয়েই আমি বেড়ে উঠেছি। তাদের ইতিহাস এবং শিল্পকে আত্তীকরণ করেছি। তারপর আমি পান করেছি আপনাদের অসামান্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অমৃত।
এই সবকিছু থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে, আমার নিজস্ব উদ্বেগ ও ত্রাসের মিলমিশে আমার শব্দজগৎ গড়ে উঠেছে। মিসরীয় সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ ১৯৮৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান।