অর্থভুবন ডেস্ক
কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। সমৃদ্ধ সংগীত ক্যারিয়ার তার। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। বিশেষ দিনটি ঘিরেই এ আয়োজন। লিখেছেনÑ তারেক আনন্দবর্তমান ভাবনাসাংগীতিক জগতে যদি আমাকে কখনো দরকার পড়ে, আমি আসব। তবে আগের মতো এত ব্যস্ত হতে চাই না। আমি বুঝতে পারি সবার একটা সেরা সময় থাকে সেই অধ্যায়টি আমি নিষ্ঠার সঙ্গেই সাংগীতিক জগৎকে দিয়েছি। প্লেব্যাক করেছি শ্রমিকের মতো। বিনিময়ে মেলা সম্মান পেয়েছি। এ জায়গা থেকে আমি আর কোনো কিছু পাওয়ার আশা করি না। আমার মনে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি দিয়েছি এবং পেয়েছি। এখন আমি মুক্ত। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন স্বাভাবিক মৃত্যু উপহার পাই স্রষ্টার কাছে। আর কিছু চাওয়া নেই।আজকের দিনেআমার এ বছরের জন্মদিনে আমি আমার আমিকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চাই। জন্মদিন মানেই মৃত্যুদিনের কাছে এগিয়ে যাই এ ভাবনা থেকে আমি সরে আসিনি। তবে জন্মদিনে নাতি-নাতনি যদি আমার সঙ্গে ওইদিন নির্মল আনন্দে মেতে থাকে সেটুকুই আমার জন্য অনেক পাওয়া হবে। চুয়ান্ন বছরে পা দেব এটা দারুণ অনুভূতি। সিনিয়র হয়েছি। চুল পাকছে। পরিপক্ব হচ্ছি। ভাবনায় স্থিরতা আসছে; তবে আমি এই দ্বিতীয়ার্ধে আমার তৃতীয় নয়ন উন্মোচিত করেছি। সুখী অবসর জীবন কাটাচ্ছি। বগুড়ায় আমার এক খণ্ড জায়গা আছে। সেখানে এই পৃথিবীর অস্থায়ী আবাস করেছি। সেখানে দ্বিতীয় এপিসোডে বাস করছি।আনন্দময় শৈশবআমার জন্ম ঢাকাতেই। বাবা-মায়ের তৃতীয় কন্যা আমি। আমরা পাঁচ ভাইবোন। ছোটবেলায় সাধারণত অনেক শিশুই চঞ্চল থাকে, দুষ্টু থাকে। আমি দুষ্টু ছিলাম না। তবে স্বল্পভাষী ও বুদ্ধিদীপ্ত ছিলাম। শৈশবে ভাইবোনদের সঙ্গে খুব মজার সময় কাটত। আমার সব ভাইবোনই গান গাইতে পারে। সবাই একসঙ্গে গান করতাম। ছবি আঁকতাম। আমিই সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতাম। তা না হলে পর পর দুই কন্যার পর তৃতীয় কন্যা হিসেবে আমার কপালে অবহেলা জুটতে পারত। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক শুকরিয়া তিনি আমাকে আনন্দময় শৈশব দিয়েছেন। শিল্পী হওয়ার গল্পবাবার খুব শখ ছিল তিনি গান করবেন। কিন্তু বাবার সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। আমাকে দিয়ে তার ইচ্ছাটা পূরণ করতে চেয়েছেন। গানের শুরুটা বাবার কাছেই। তিনিই আমার প্রথম ওস্তাদ। এ ছাড়া তিন গানপাগল মানুষ মোহাম্মদ মেসের উদ্দিন ভাই, তোফাজ্জল হোসেন ভাই ও জালাল উদ্দিন ভাইয়ের কাছে কিছু সবক নিই। তার পর বাবা খুঁজে বের করেন ওস্তাদ ফজলুল হক সাহেবকে। কিন্তু তার কাছে আমার মাত্র একদিন সারেগামাপা সবক নেওয়ার সুযোগ হয়। এর পর আমি সত্যিকার অর্থে উচ্চাঙ্গসংগীত এবং গজল ভজন ঠুমরী দাদরা টপ্পা শিখি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং সংগীত বিশেষজ্ঞ বশীর আহমেদ সাহেবের কাছে। অনেক কষ্ট সয়েও আমার বাবা আমাকে শিল্পী বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। আর আমার স্বামী সুরকার সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান সাহেব আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে গাইতে হয়। আর যাদের সুরে গান গেয়েছি সবার কাছেই আমার সংগীত শেখার কৃতজ্ঞতা।প্রথম প্লেব্যাক১৯৮৪ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘বিধাতা’ চলচ্চিত্রে গান গেয়ে আমার আত্মপ্রকাশ। তিন হাজারের মতো চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গুণী সুরকারদের সান্নিধ্যেমইনুল ইসলাম খান অসম্ভব সুন্দর গান করেন। কিন্তু তার গান অনেক কঠিন। তার মৌলিকতা আমার খুবই পছন্দ। শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আলীÑ অত্যন্ত উঁচু মাপের সুরকার ছিলেন। শ্রদ্ধেয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলÑ তিনি খুবই দরদ দিয়ে গান করতেন। যেহেতু নিজে লিখেছেন ও সুর করেছেন তাই তার গান হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আজকের আমার এ অবস্থানে আসার পেছনে মইনুল ইসলামের পর যার অবদান বেশি তিনি হলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। শ্রদ্ধেয় আলম খানÑ তার সঙ্গে আমার অপূর্ব কিছু স্মৃতি আছে, অসম্ভব বিনয়ী ও ভদ্র একজন মানুষ। এ ছাড়া কাজ করেছি শ্রদ্ধেয় সংগীত পরিচালক সুরকার শেখ সাদী খান, খন্দকার নুরুল আলম, সেলিম আশরাফ, শওকত আলী ইমন, ইমন সাহা ও আলী আকরাম শুভর সঙ্গে।পুরস্কার ও সম্মাননাজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (তিনবার) থেকে শুরু করে মেরিল-প্রথম আলো পর্যন্ত যত পুরস্কার আছে, সব একাধিকবার পেয়েছি। তবে দর্শকদের ভালোবাসা আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। একজন টোকাই আমাকে ৪টি তুলার পাখি উপহার দিয়েছে। এটা আমার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।