অর্থভুবন ডেস্ক
জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির সূক্ষ্ম-সুচারু ব্যবহারের অভিজ্ঞতা মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনের অবর্তমানে ‘ভারপ্রাপ্ত বা স্থলাভিষিক্তের দায়িত্ব’ চাকরিবিধি সমর্থিত একটি স্বাভাবিক বিষয়। ‘ভারপ্রাপ্ত বা স্থলাভিষিক্তের দায়িত্ব’ চাইলেই পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহর বিধানের চিরন্তনতা—‘…তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্যদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও…।
’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২৬)
প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ। আমরা এমন কাউকে ক্ষমতায় নিযুক্ত করব না, যে দায়িত্ব চায় এবং এমন লোককেও না, যে দায়িত্ব লাভের প্রত্যাশা করে।’
প্রিয়নবী (সা.) আরো বলেন, ‘দায়িত্ব ও ক্ষমতা চেয়ে নিয়ো না। কারণ যদি তোমার চাওয়ার কারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে তো তোমাকে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া হবে…।
’
মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে চেয়েছিলেন তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে যেন তাঁর সহকর্মী করা হয়। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আমি (আল্লাহ) নিজ অনুগ্রহে তার (মুসা) ভাই হারুনকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী বানিয়ে দিলাম।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৩)
হারুন (আ.) ছিলেন শুধুই নবী। মুসা (আ.) নবী ও রাসুল।
তাঁর ওপর তাওরাত কিতাব নাজিল হয়। মুসা (আ.) যখন তুর পাহাড়ে গেলেন তখন তিনি হারুন (আ.)-কে তাঁর অনুপস্থিতিতে স্থলাভিষিক্ত করেন। হারুন (আ.)-এর সীমাবদ্ধতা এখানে স্পষ্ট। মুসার (আ.) অবর্তমানে তাঁর সম্প্রদায় ‘গো-পূজা’ করে অবাধ্যতার চরমে পৌঁছে। তবু হারুন (আ.), মুসার (আ.) ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—‘মুসা বলল, হে হারুন, আপনি যখন দেখলেন তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে আপনাকে বাধা দিল… আমি আশঙ্কা করেছিলাম, আপনি বলবেন, আপনি বনি ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন ও আমার কথা শোনায় যত্নবান হননি।’ (সুরা ত্বহা,আয়াত : ৯২- ৯৪)
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলের অবর্তমানে কাজের যথার্থ ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ভারপ্রাপ্ত বা স্থলাভিষিক্ত’ নিয়োগ করা হয়। প্রিয়নবী (সা.) মদিনার বাইরে গেলে, বিভিন্ন সাহাবিকে তিনি প্রশাসক নিযুক্ত করতেন। একবার তিনি আলী (রা.)-কে এবং অন্যবার আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.)-কে মদিনার প্রশাসক বানিয়েছেন।
তাবুক যুদ্ধের সময় প্রিয়নবী (সা.) আলী (রা.)-কে মদিনায় রেখে গেলেন। তখন মুনাফিকরা নানা ধরনের কটূক্তি করে। আলী (রা.) সব কথা শুনে যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে প্রিয়নবী (সা.)-এর সামনে উপস্থিত হয়ে জানালেন, মুনাফিকরা এমন বলাবলি করছে। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘হে আলী, তুমি কি আমার জন্য এরূপ হতে সন্তুষ্ট নও, যেরূপ ছিলেন হারুন (আ.) মুসা (আ.)-এর জন্য।’ তখন আলী (রা.) মদিনায় ফিরে এলেন। ‘ভারপ্রাপ্ত বা স্থলাভিষিক্তের দায়িত্ব’ পালনের অনুপম বৈশিষ্ট্য সততা ও বিশ্বস্ততা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা (মুমিনরা) সেসব লোক, যারা আমানতের প্রতি লক্ষ রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতগুলো তার প্রকৃত পাওনাদারদের কাছে প্রত্যর্পণ করতে…।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
দায়িত্বশীলতা রক্ষা না করা মুনাফিকের নিদর্শন। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে এই চার স্বভাব আছে, সে খাঁটি মুনাফিক—১. আমানত খিয়ানত করে, ২. মিথ্যা বলে, ৩. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ৪. বিবাদে অশ্লীল কথা বলে। (বুখারি)
সততা, কর্তব্যপরায়ণতা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিশেষ যোগ্যতা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতঃপর তাকে সৎকর্ম ও অসৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সে-ই সফল হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে। আর সে-ই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষিত করবে।’ (সুরা শামস, আয়াত : ৭-১০)
আত্মপ্রশংসা ও প্রচার দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোষণীয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই সম্যক জানেন কে আল্লাহভীরু।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৩২)
দায়িত্বশীলতা ও আমানদদারিতার আছে ইহ-পারলৌকিক জবাবদিহি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর