অর্থভুবন ডেস্ক
গল্প লেখকদের মধ্যেও এমন অনেকেই ছিলেন যাঁরা তাঁদের গল্পের শান্ত স্রোতকে বাঁকিয়ে দিতে পারতেন অন্যান্য শাখা-উপশাখায়। ফলে জলধারা শুকিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ক্রমেই চওড়া হতে থাকত। আর এই সব আদিম কথক, যাঁরা কখনো দিনের আলো অথবা রাতের বাতির জন্য অপেক্ষা করেননি; বরং অন্ধকার আর ছায়াকে কাজে লাগিয়ে গল্পের রোমাঞ্চ তৈরি করেছেন। খরা অথবা উদ্দাম পাহাড়ি ঝরনা, বজ্রপাত, কোনো কিছুই তাঁদের পথরোধ করতে পারেনি।
যখন কেউ লিখতেই শেখেননি, তখন কী ধরনের গল্প বলা হতো? সেই আম যুগ থেকেই তো ছিল হত্যা আর খুন-জখমের পর্ব। গণহত্যা আর রক্তাক্ত যুদ্ধ গল্পের বিষয় হিসেবে বরাবরই মাপসই। বন্যা এবং খরার মতনই গণহত্যাও সেই সাবেক আমলেই গল্পের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। কোনো পরিবারে গবাদিপশু আর ক্রীতদাসের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বর্ণনা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। কোনো গল্পই বিশ্বাসযোগ্য হতো না, চরিত্রের বংশানুক্রমিক তালিকা ছাড়া; বিশেষ করে গৌরবগাথাগুলোতে, কে কবে এবং কার আগে জন্মেছেন, সেটা ছিল জরুরি।
ছিল ত্রিকোণ প্রেমের গল্প, যা অবশ্য আজও সমান জনপ্রিয়। আর ছিল সেই সব আদি রাক্ষসের কাহিনি, যেখানে অর্ধেক মানব আর বাকি অর্ধেক রাক্ষস ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়! তাদের নিয়ে বহু কল্পকাহিনি ও জাদুর অবতারণার পর তাকে বিস্তর মাজাঘষা করে পাঠকের সামনে আনতেন একজন লেখকই। তাঁর নাম হয়তো হোমার বা একসঙ্গে অনেক লেখকের লেখা যেমন বাইবেল। চীন বা পারস্য, ভারত অথবা পেরুর পার্বত্য অঞ্চল, যেখানেই লেখালেখির ঔৎকর্ষ দেখা গেছে, সেখানেই এই গল্পবলিয়েরা কালক্রমে সাহিত্যের অনুরক্ত হয়ে উঠেছেন।
আর আজ আমরা যারা লিখতে শিখেছি, তারাও মুখে গল্প বলার সেই ধারাটিকে বজায় রেখেছি। সেটা একদিকে ভালোই। নয়তো আমাদের গল্প বলার ভঙ্গিটাই শুকনো হয়ে যেত ক্রমেই। আমাদের চারপাশে যে এত বই প্রতিনিয়ত জমে উঠছে, এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে!
জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস ১৯৯৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।