অর্থভুবন ডেস্ক
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর ও কলাগাছিয়াচরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে এক ভাসমান বাজার। ট্রলারে ভেসে ভেসেই ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনা করেন। দেখে এসেছেন এম সোহেল
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভাসছে কয়েকটি ট্রলার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ট্রলারগুলো নোঙর করে রাখা। হয়তো যাত্রাবিরতি চলছে। কাছে গেলে ভুল ভাঙবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই মেলে এখানে
বর্ষা মৌসুমে গড়ে ওঠা এই বাজারে ট্রলারে ভেসে ভেসেই ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনা করেন। দিন গড়িয়ে রাত নামলেই বাজার জমে ওঠে। এখানে বেশির ভাগ ক্রেতাই সাগরে মাছ ধরা জেলে। ট্রলারে মজুদ রাখা খাবার বা জ্বালানি ফুরালেই ভিড় জমান তাঁরা।
বছর পাঁচেক আগের কথা। রাঙ্গাবালীর উত্তর চরমোন্তাজ এলাকার ব্যবসায়ী জিয়া ফরাজি সাগরের মোহনায় ভাসমান দোকান করার উদ্যোগ নেন। স্থানীয় বাজার থেকে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, শুকনা খাবার, জ্বালানি তেলের পাশাপাশি কিছু ওষুধপত্রসহ একটি ট্রলার নিয়ে পাড়ি জমান সেখানে।
উদ্যোক্তা জিয়া ফরাজি বলেন, ‘সাগরে গিয়ে অনেক সময় জেলে ট্রলারে রসদ ফুরিয়ে যায়। তেল শেষ হয়ে যায়। তখন বিপদে পড়েন জেলেরা। তাঁদের কথা ভেবে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ শুরুতে শুধু জিয়া ফরাজির দোকান ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আরো অনেকে যুক্ত হয়েছে। এখন ইলিয়াস ফরাজি, রেজাউল, কামাল মৃধা, নেসার মুন্সি, কবির গাজীসহ ছয়জনের দোকান আছে সেখানে।
জেলেরা বলছেন
দোকানে মালপত্র কিনতে এসেছিলেন জেলে শাহাবুদ্দিন মোল্লা। তাঁদের ট্রলারের রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ভাসমান দোকানে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সাগরে নামার সময় সদাই কেনা লাগে। সাগরে থাকতেও সদাই লাগে। মাঝে মাঝে তেল ফুরাইয়া যায়। কূলে আসা সময়ের ব্যাপার। এখানে কয়েকটি দোকান রয়েছে। ফলে আমাদের কূলে যাওয়া লাগে না। সাগরে বিপদের মুহূর্তে এই দোকানই আমাদের ভরসা।’ একই কথা জানালেন সাগর মাঝি। বাড়ি তাঁর ভোলায়। তিনি বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সোনারচরের অদূরে মাছ ধরছেন। তাঁদের ট্রলারের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় এখানে এসেছেন তেল নিতে। বললেন, ‘এখানে তেল না থাকলে অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে চরমোন্তাজ থেকে সংগ্রহ করতে হতো।’
পর্যটকরাও আসেন
ভাসমান এই দোকানের ক্রেতা শুধু জেলেরাই নন, নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা সোনারচর, চরহেয়ার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও। এমন একজন সৈয়দ জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ট্রলার নিয়ে সোনারচর এসেছিলাম তার তেল প্রায় ফুরিয়েছে, খাবারও শেষের দিকে। জেলেদের কাছে সহযোগিতা চাইলে তাঁরা ভাসমান এই বাজারের খবর জানালেন আমাদের।’ দোকানিরা বলেন, বর্ষায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই ভাসমান দোকানে এসে কেনাকাটা করেন। ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের (ভার্ক) প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহসীন তালুকদার বলেন, ‘চরের মানুষের জন্য এটি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে।
চরমোন্তাজ থেকে বিচ্ছিন্ন সাগরের মোহনায় মৌসুমভিত্তিক গড়ে ওই ভাসমান বাজারে জলদস্যু বা ডাকাতদলের কোনো ভয় নেই বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। গভীর সমুদ্রে জলদুস্যদের ভয় থাকে, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এখানে কয়েক শ জেলে ট্রলার নোঙর করে থাকে। পাশাপাশি জেলেরা তাঁদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও সংগ্রহ করেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এখানে জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।