অর্থভুবন ডেস্ক
// বাউফল (পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি //
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সাবরেজিষ্টার অফিস থেকে একই নম্বরের একই তারিখের নিবন্ধনকৃত দলিলের দুই রকম নকলকপি সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভুয়া নকলকপি দিয়ে আসল মালিককে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই রকম নকলকপি সরবরাহ করার সত্যতা স্বীকার করেছেন বাউফল উপজেলা সাবরেজিষ্টার।
উপজেলা সাবরেজিষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভরিপাশা গ্রামের রত্তন আলী মৃধার ছেলে মোহাম্মাদ সুলতান আহমাদ একই গ্রামের ক্ষিরোদ চন্দ্রের ছেলে তাপস সেনের (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭৩৪৯৩৯৩৯৭০) কাছ থেকে ভরিপাশা মৌজার ৬৩৮ নং খতিয়ানের ৬৩৮০ ও ৬৩৮১ নং দাগের ৫৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার দলিল নম্বর ৭০৪৩/২০২৩।
পরবর্তীতে একই বছরের ৪ অক্টোবর ওই দলিলের অবিকল নকল কপি উঠিয়ে সুলতান আহমাদ নিজের নামে নামজারী করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি কার্যালয়ে আবেদন করেন। দলিলের ওই নকল কপিতে সাবরেজিষ্টার হাফিজা হাকিম , নকলকারক রেখা বেগম, পাঠক লাইলী আক্তার ও তুলনাকারক নাজমা বেগমের স্বাক্ষর রয়েছে। সুলতান আহমাদের ওই দলিলের দাতাকে ভুয়া দাবি করে তার (সুলতান আহমাদ) নামে নামজারি না করার আবেদন করেন ভরিপাশা গ্রামের মো. আনিচুর রহমান। যিনি উপজেলার কেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ইউপি সদস্য।
আনিচুর রহমানের দাখিলকৃত অবিকল নকলকপির দলিলে দেখা যায়, গ্রহীতা মোহাম্মাদ সুলতান আহমাদ ও দাতা তপন সেন। দলিলের নম্বর (৭০৪৩/২০২৩), দলিল নিবন্ধনের তারিখ একই উল্লেখ রয়েছে। দাতার নাম তপন সেন উল্লেখ থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ সব ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে তাপস সেনের।
ওই দলিলে সাবরেজিষ্টার হাফিজা হাকিম , নকলকারক জাহিদুল ইসলাম, পাঠক ইমরান হোসেন ও তুলনাকারক আনিচুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
আনিচুর তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তাপস সেনের কাছ থেকে নয়, তপন সেন নামে ভুয়া ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। তপন সেনের অস্তিত্বহীন ভরিপাশা গ্রামে নাই। সুলতান আহমাদ ভুয়া ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন।
সুলতান আহমাদ বলেন, তিনিতো তাপস সেনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। তাই আনিচুর রহমানের অভিযোগের সঙ্গে দাখিলকৃত দলিলে তপন সেনের নাম দেখে হতভম্ব হয়ে যান। এ কারণে তিনি সাবরেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ফের চলতি বছরের ২৬ জুলাই ওই দলিলের (দলিল নম্বর ৭০৪৩/২০২৩) অবিকল নকলকপি তোলেন। সেখানে সব ঠিকঠাক দেখে এর প্রতিকার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২৩ আগষ্ট উপজেলা সাবরেজিষ্টার বরাবরে আবেদন করেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাপস সেন জমির মালিক হলেও জোড়পূর্বক দখলে রেখেছিলেন আনিচুর। সেই দখল ছুটে যাওয়ায় বিভিন্নভাবে আনিচুর তাদেরকে হয়রানি করছেন।
এ বিষয়ে আনিচুর রহমান বলেন, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস থেকে যে অবিকল নকলকপি সরবরাহ করা হয়েছে, সেখানে দাতার নাম তপন সেন। আর তপন সেন নামে কোনো মানুষ ভরিপাশা গ্রামে নাই। এ কারণে তিনি সুলতান আহমাদের নামে নামজারি না করার জন্য আবেদন করেছেন। তবে তাপস সেনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করলে সঠিক আছে। কিন্তু তাপস সেন একাই ৫৪ শতাংশ জমির মালিক না। তাপস সেনের জমি তার (আনিচুর) দখলে রাখার বিষয়ে বলেন, ওই জমি মসজিদের সামনে। জমির আয়ের টাকা মসজিদে দেয়া হত।
উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার হাফিজা হাকিম রুমা একই দলিলের দুই রকম অবিকল নকলকপি সরবরাহ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘তিনি বিব্রত, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সব দলিল পড়ে পড়ে স্বাক্ষর করার সুযোগ থাকে না। এ কারণে নকলকারক, পাঠক ও তুলনাকারক স্বাক্ষর করার পরে তিনি স্বাক্ষর করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, সুলতান আহমাদের দলিল সঠিক।