অর্থভুবন প্রতিবেদক
কথায় কথায় দাম বাড়ছে সব ধরনের পণ্যের। আলু থেকে পেঁয়াজ, চাল, ডাল, মরিচ, তেল ও সব ধরনের তরিতরকারির মূল্য লাগামহীন। নিম্নআয় আর মধ্যআয়ের মানুষ কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে, সেটির খবর কে রাখবে। দিশাহারা জনগণ। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য মেলাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। চার থেকে পাঁচজনের সাংসারিক দৈনন্দিন খরচ জোগাড় করতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো মহাসংকটে সময় পার করছে। চাকরিজীবী সরকারি ও বেসরকারি যাদের নির্ধারিত মাসিক একটি আয় আছে, তারাও তাদের সেই মাসিক আয় দিয়ে পরিবারের সাংসারিক খরচ পোষাতে পারছে না।
সন্তানের স্কুল, কোচিং, টিফিন, যাতায়াত খরচ মিটিয়ে মাসিক পরিবারের খরচ সামাল দিতে পারছে না সরকারি-বেসরকারি সব স্তরের কর্মজীবী মানুষ। একটি নির্ধারিত পরিমাণের আয়-রোজগারের বেতন-ভাতা নিয়ে চাকরি করেন সব সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবী। নির্ধারিত আয়ের মধ্যে ওইসব পরিবার চালাতে ও চলতে হয়। এর মধ্যে সব ধরনের পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। যাতায়াত খরচ বাড়ছে। বাসা ভাড়া বাড়ছে। বাড়ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ। প্রিপেইড বিদ্যুতে টাকা রিচার্জ করলেই প্রতি মাসে দুই থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত নানা ধরনের চার্জ কর্তন করতে দেখা যায়। এর মধ্যে ঠিকভাবে বিদ্যুৎ মেলে না অনেক এলাকায়। গ্যাস-বিদ্যুৎ-ওয়াসার বিল ইত্যাদি কর্মজীবী, শ্রমজীবী জনগণ পরিশোধ করছে। তবুও যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেবা মেলে না। এসব বিষয়ে অভিযোগ ও আপত্তি কোথায় গিয়ে জনগণ বলবে তারও কোনো সঠিক স্থান নেই। নানা ধরনের ভ্যাট চার্জ দিতে দিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শিল্পমালিক অস্থিরতার মধ্যে আছে। শিল্প-কারখানার সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও বিদ্যুৎ নিয়ে নানাভাবে ভোগান্তির মধ্যে থাকে। যথাসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।
শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ছোট-বড় মার্কেট সব প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ পাওয়া যায় বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে। অব্যবস্থাপনা এখানে জগদ্দল পাথরের মতো একটি শ্রেণি সেবার বিপরীতে জনভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। জনগণ দৈনন্দিন কর্মজীবন পরিচালনা করে রোজগারের মাধ্যমে পরিবার-পরিজনের চাহিদা কীভাবে পূরণ করবে, তা নিয়েই জনগণের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। নানাভাবে বিভিন্ন প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির জন্য সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্রকে দায়ী করছে। এসব সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক প্রতিবেদন নানাভাবে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় দেশব্যাপী প্রচার হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরাও সিন্ডিকেট কারসাজিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রশ্ন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেদিন সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছিলেন। বাস্তবে এর কোনো ফল বাজারে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী পত্রিকায় এসব প্রতিবেদন কী হিসেবে দেখেন সেখানেও জনগণের যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি তদারকির নির্দেশ থাকলেও কেন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হয় না। আমাদের বোধগম্য নয়। জনগণ না খেয়ে মারা যাক, সরকারের কিছু যায় আসে না। মানুষ কর্মসময় পার করে কী খাচ্ছে এবং কী খাবে তা ঠিক করতে পারছে না। বাজারে-মার্কেটে গেলে মানুষ তার হুঁশ হারিয়ে ফেলে। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারের আমলে পঞ্চাশ টাকা আলু বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
বাজার মনিটরিং কার দায়িত্ব? যাদের দায়িত্ব তারা এ দায়িত্ব পালন করছে কিনা। করলে বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসছে না কেন। কারা এসবের মধ্যে কারসাজি করছে। স্থানীয় প্রশাসন, জাতীয় সরকার, ভোক্তা অধিকার পরিষদ, বাজার কমিটি, ব্যবসায়ী সমিতি নানা ধরনের অনেক সংগঠন কাজ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। কই কোনো ধরনের তৎপরতার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এভাবে কি একটি সমাজ-পরিবার চলতে পারে?
সরকার জনগণের জন্য। রাজনীতি, ক্ষমতা, গণতন্ত্র সবকিছু জনকল্যাণে। কিন্তু দেশে সরকার আছে, সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। কই তাদের মাধ্যমে জনকল্যাণের জন্য প্রকৃতভাবে এই পরিস্থিতিতে কোনো কল্যাণ মিলছে না। ভাতের হোটেল, নাস্তার দোকান, সবগুলো খাবার পণ্য ইচ্ছেমতো বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তাদের একটিই বক্তব্যÑ চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, নুন, মরিচসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। তাই আমাদের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এভাবে দেশের নিরীহ মানুষ সর্বদা হয়রানি ও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর সঙ্গে কোনো কথা বলে না ডাক্তার। প্রেসক্রিপশনে কয়েকটি ওষুধের নাম লিখে চিকিৎসা শেষ। আর চেম্বারে গেলে দরকারি-বেদরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীকে অর্থনৈতিক সংকটে ঠেলে দেওয়া হয়। এই হলো আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসাসেবার হালচাল। আর সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি খরচে দেশের বাইরে গিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিয়ে আসেন। জনগণ কোথায় যাবে। জনগণের দায়িত্ব কে নেবে। জনগণের জন্য রাষ্ট্র ও সরকার। জনগণের সুখ-দুঃখ দেখার ও শোনার জন্য গণতান্ত্রিক সরকার। আসলে কি সরকার জনগণের সুখ-দুঃখের অংশীদার হচ্ছে?। জনগণের কাতারে এসে জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরুন। তবেই জনগণ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ^াস রাখতে পারবে।