অর্থভুবন ডেস্ক
পেঁয়াজ, আলুসহ নানা ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি চট্টগ্রামে এবার অস্থির হয়ে উঠেছে ডালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ডালে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে ডালের দাম বেড়েছে বলে জানান আড়তদার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ডালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ডালের দাম বাড়াচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার শাহজালাল স্টোরের মালিক আরাফাত হোসাইন বলেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে কোনোরকম ডালের সংকট নেই। গুদামভর্তি ডাল রেখে ব্যবসায়ীরা বলছেন সংকটের কথা। আর বাড়িয়ে নিচ্ছেন দাম।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মোটা মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ৯৫ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা কম ছিল। এ ছাড়া চিকন মসুরের ডালের দামও ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। একইভাবে খেসারি ডাল কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায় এবং মটর ডাল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়।
সে হিসেবে খুচরা বাজারের মোটা মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রয় করা হচ্ছে ১১০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছিল। এ ছাড়া চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। খেসারি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকায় এবং মটর ডাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের ডাল আমদানিকারকরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ডালের বুকিং দর বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে অনেক ডাল ব্যবসায়ী এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেননি। ফলে আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে দেশে এখনও ডালের বাজার সহনশীল রয়েছে।
ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে, এটিই বাজারের ধর্ম। এখানে কৃত্রিম সংকট তৈরির কিছু নেই।
তিনি বলেন, বাজারে যখন পণ্য বেশি আসে তখন ব্যবসায়ীরা কার আগে কে পণ্য বিক্রি করবেন সেই প্রতিযোগিতায় নেমে যান। কারণ ভোগ্যপণ্যের বাজার কখনো স্থিতিশীল থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যবসায়ীদের আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এমনও হয় এলসি হয়েছে এক দরে কিন্তু পণ্য খালাস পর্যায়ে যখন কোনো কারণে ডলারের দাম বেড়ে যায়।
ব্যবসায়ীদের তখন বাড়তি ডলারের মূল্য পরিশোধ করে পণ্য খালাস করতে হয়। আমদানি ব্যয় বাড়লে সেটি পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে তিন ধরনের ডাল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ হাজার টন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ডালের মোট চাহিদা ২৫ লাখ টন হলেও বছরে উৎপাদন হয় মাত্র ৯ লাখ টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মুগ, ৩০ শতাংশ খেসারি, ১৫ শতাংশ মসুর ও ৫০ শতাংশ ফেলন ডাল উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে।
ফলে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে দেশে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয় মসুর ডাল।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। বর্তমানে বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। একটার পর একটা দাম বেড়েই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে বাজারে ডালের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ছয় মাস আগে কম দামে আমদানি করা ডাল বুকিং দর বাড়ার অজুহাত তুলে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ডালের সংকট নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার মনিটরিং না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন বলে মত দেন তিনি।