অর্থভুবন ডেস্ক
তুরস্কের পত্রপত্রিকায় সাংবাদিক আহমেত জোশকুনায়দিন বাংলাদেশ নিয়ে লিখে চলেছেন সেই কবে থেকে! ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। বয়স ষাটের কোঠায়, তবু পড়াশোনা থেমে নেই। একের পর এক মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করে চলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সম্প্রতি ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিষয়ক একটি থিসিস সম্পন্ন করেছেন।
তুর্কি ভাষা জানা একজন বাঙালি হওয়ার সুবাদেই মূলত এই গ্রন্থের সঙ্গে আমার পরিচয়। রচনার শুরুর দিকেই লেখক আমাকে গ্রন্থটি সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। গ্রন্থটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার জীবন ও দর্শন বিশ্লেষণে অবধারিতভাবেই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের রাজনীতির হালচাল, ইতিহাস প্রভৃতি প্রসঙ্গের সাক্ষাৎ পেতে হয়। সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেকে বাংলার আকাশে মুক্তির লাল সূর্যটির উদয় ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাহসী নেতৃত্বের গুণে। শেখ হাসিনা শৈশব থেকেই বেড়ে উঠেছেন পিতা মুজিবের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চর্চাকে খুব কাছ থেকে দেখে। বিভিন্ন আন্দোলনে বারবার জেলে যেতে হয়েছে মুজিবকে, পরিবারের বড় সন্তান হাসিনা মায়ের সঙ্গে সামলে রেখেছিলেন পুরো পরিবারকে। এরপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং দুই বোন হাসিনা ও রেহানার বিদেশে অবস্থানের জন্য বেঁচে যাওয়া, বাঙালি জাতির ইতিহাসের এই ভয়ংকর ও শোকের অধ্যায়ের কালো ছায়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কিভাবে বিচলিত করেছে—এর তথ্যবহুল ব্যাখ্যার পাশাপাশি শেখ হাসিনার শোককে শক্তিতে পরিণত করে নতুন উদ্যমে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের কথাকে তুর্কি শব্দগুচ্ছের বুননে তুলে ধরেছেন লেখক।
বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর প্রাসঙ্গিক পরিবেশনের পাশাপাশি ভূগোল, সাহিত্য, ভ্রমণ প্রভৃতি উপাদানের যথাযথ সংশ্লেষণ গ্রন্থটিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। লেখক তাঁর বাংলাদেশ ভ্রমণের গল্পও উল্লেখ করেছেন। তুর্কি পাঠকদের জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞানার্জনের আগ্রহ সঞ্চারে একটি অবশ্য পাঠ্য হওয়ার সব মৌলিক উপকরণ এতে রয়েছে।
তুরস্কের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইলবার ওরতায়লি গ্রন্থটির ভূমিকায় লিখেছেন, ‘১৯৭০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত পরিচিত একটি নামে পরিণত হয়েছিলেন মুজিবুর রহমান।…তাঁকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রাতারাতি পরিবর্তিত হতে দেখেছি।…পরবর্তী সময়ে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আশা করি, তুরস্কে শেখ হাসিনাকে আরো বিশদভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
লেখক আহমেত জোশকুনায়দিন বাংলাদেশ সম্পর্কে তুর্কিদের জানাতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশ মিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তোলার জন্য তাঁর এই অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা। অদ্যাবধি তিনি ৭০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন, আয়ত্ত করেছেন অনেক ভাষা। কিন্তু বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর আগ্রহ ও ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি—এমনটাই বলে থাকেন সব সময়।