অর্থভুবন ডেস্ক
‘তারা কি মনে করে, আমি তাদের যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি তা দ্বারা তাদের কল্যাণ সাধনে ত্বরা দেখাচ্ছি? না, বরং (প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে) তাদের কোনো অনুভূতি নেই। নিশ্চয় যারা নিজ প্রতিপালকের ভয়ে ভীত এবং যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহে ইমান রাখে এবং যারা নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করে না এবং যারা যেকোনো কাজই করে, তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে, তাদের নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। তারাই কল্যাণ অর্জনে তৎপরতা প্রদর্শন করছে এবং তারাই সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে।’ সুরা মুমিনুন : ৫৫-৬১
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নেককাজে অগ্রগামীদের চারটি মৌলিক গুণের কথা বলা হয়েছে। মক্কার কাফেররা মনে করত এবং এখনো অনেক মানুষ এই ভুল ধারণায় নিপতিত যে, যেহেতু ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়ার আরাম-আয়েশ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন সেহেতু এটা এ কথা প্রমাণ করে, আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি আছেন। খুশি না হলে কি তিনি এত নেয়ামত দিতেন!
এই আয়াত বলছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি বোঝার উপায় দুনিয়ার নেয়ামত নয়। দুনিয়ার নেয়ামত তো তিনি যাকে ভালোবাসেন তাকেও দেন এবং যাকে ভালোবাসেন না তাকেও দেন। তবে দ্বীন পালনের নেয়ামত তিনি তাদেরই দেন, যাদের তিনি ভালোবাসেন। তাই তার ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির মাপকাঠি দ্বীন, দুনিয়া নয়।
এরপর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কয়েকটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যাসহ গুণগুলো উল্লেখ করা হলো
এক. তারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে ভীত থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে ভীত থেকে তার নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকে এবং করণীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করে। এসব নেক আমল করার পরও তাদের মন থেকে ভয় কাটে না। সব সময় এই পেরেশানি লেগেই থাকে ইমানের মৃত্যু নসিব হবে তো? হায়! আল্লাহর হক তো কিছুই আদায় করতে পারলাম না!
দুই. তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের ওপর ইমান রাখে। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা যেসব আয়াত অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো তিলাওয়াত করে। সেগুলোর অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের চেষ্টা করে। পাশাপাশি পৃথিবীতে আল্লাহর যেসব নিদর্শন রয়েছে, সেগুলো নিয়েও চিন্তা-ফিকির করে। যেমন মায়ের গর্ভে শিশুর বিকাশ, বৃষ্টির অবতরণ, মাটির নিচে পানির সংরক্ষণ ইত্যাদি। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে সে স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে এবং তার কুদরত ও ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করে।
তিন. তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে না। শিরক দুই প্রকার শিরকে জলি, শিরকে খফি। আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করা, মানত করা এগুলো শিরকে জলি বা বড় শিরক। একজন মুমিন তো এসব বড় শিরকে লিপ্ত হওয়ার কল্পনাও করতে পারে না।
আরেক ধরনের শিরক হলো শিরকে খফি বা গোপন শিরক। যেমন আমলের মধ্যে লোকদেখানোর প্রবণতা থাকা। দানের ক্ষেত্রে সুনাম-সুখ্যাতির নিয়ত থাকা। তো আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই ছোট শিরক থেকেও বেঁচে থাকেন। শিরকে খফি আসলেও খুব মারাত্মক ও আমল বিধ্বংসী। এ থেকে বাঁচাটা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে লোকদেখানো ও সুখ্যাতির নিয়ত বড়ই মারাত্মক। নিজের কোনো কাজ একটু সুন্দর হলেই মানুষের বাহবা পাওয়ার আশা মনে জাগে। শয়তান এ পথে আক্রমণ করে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা, ইস্তেগফার করা এবং বারবার নিয়ত শুধরে নেওয়া।
চার. তারা নামাজ-রোজা, দান-সদকা যে নেককাজই করে আখিরাতের কথা সদা মনে জাগরূক রাখে। নেককাজে অগ্রগামী থাকে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে নেককাজে অংশগ্রহণ করে। নেক কাজ করে গর্ব করে না, বরং মনে ভয় রাখে, এসব নেককাজ আল্লাহ কবুল করবেন তো! আখিরাতে এগুলোর বিনিময়ে পাব তো! নেককাজের ক্ষেত্রে আমি রিয়ার (লোকদেখানোর) শিকার নই তো!
তো এখানে মোট চারটি গুণের কথা বলা হলো। আল্লাহর ভয়, আল্লাহর আয়াতগুলোর ওপর বিশ্বাস, সব ধরনের শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকা, নেককাজ করার পরও গর্ব না করা এ চার গুণের অধিকারী লোকদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, এসব লোক কল্যাণ অর্জনে সদা তৎপর থাকে এবং নেককাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়।