অর্থভুবন ডেস্ক
কয়েক বছর যাবৎ দেশে হতাশা, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিতসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করছে শিক্ষার্থীরা। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুসারে, ২০২২ সালে সারা দেশে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ৮৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
এ জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসচেতন ও সুখী করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুখলিসুর রহমান মাহিন প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হ্যাপিনেস ক্লাব’।
ক্লাবটির যাত্রা প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা মাহিন বলেন, ‘২০১৮ সালে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় লক্ষ করলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্লাবটির কার্যক্রমের প্রচারণার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ইতিবাচক বাক্যে সাজানো প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান তাঁরা। ‘হয় জিতব, নয় শিখব’, ‘ভাঙা রং পেনসিল দিয়েও রং করা যায়’, ‘ক্রাইসিসই সাকসেসের জ্বালানি’, ‘একটা খারাপ দিন যেতে পারে, জীবনটা নয়’, ‘পছন্দের প্রতিষ্ঠান নয়, পছন্দের বিষয় বেছে নেই’—এ রকম নানা ইতিবাচক বার্তা নিয়ে দাঁড়ান ক্লাবের সদস্যরা।
অভিভাবক ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি হয়, সেটিকে পরিবর্তন করতে এমন ইতিবাচক বার্তা দিয়ে সচেতনতা তৈরিতে তাঁরা এই কার্যক্রম করেন বলে জানান মাহিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচকতা, সুখবোধ, আশাবাদ ও মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা সৃষ্টি করতে ‘পজিটিভিটি ব্রিংস হ্যাপিনেস’ স্লোগানে ক্লাবটি নিয়মিত, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
করোনা মহামারির সময়ে লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনা মূল্যে অনলাইনে ‘মনচিঠি’ নামক বিভাগ চালু করে এই ক্লাবটি। যেখানে ভয়েস কল ও লিখিতভাবে কেউ নিজের সমস্যার কথা জানালে বিনা মূল্যে কাউন্সেলরদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা দেওয়া হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ‘মনচিঠি’র কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে এই সেবাটির কাজ বন্ধ থাকলেও শিগগিরই আবারও চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা মাহিন।
ক্লাবের সদস্য ওয়াজিহা জাহান জুঁই কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন বরং সারা বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতন যেকোনো মানুষ চাইলে যোগ দিতে পারেন। যে কেউ চাইলে নিজেদের কষ্টের কথা শেয়ার করতে পারেন চিঠির মাধ্যমে বা সরাসরি ফোনে। এ ছাড়া অনলাইন কাউন্সেলিং সেবা ও অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টদের সেশন আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমরা মাঝেমধ্যে মন ভালো করতে সবাই একসঙ্গে হ্যাংআউট ও প্রাতর্ভ্রমণে যাই। আমাদের কাজ শুধু মন ভালো করার উপায় বের করাই নয় বরং এ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা।’
ইতিবাচকতা, সুখবোধ, আশাবাদ ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘হ্যাপিনেস ফাউন্ডেশন’ শিরোনামে দেশব্যাপী কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানান মাহিন। ইতোমধ্যে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ চলছে। মাহিন বলেন, ‘শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না, আমরা চাই সারা দেশের মানুষের মধ্যে ইতিবাচকতা, সুখবোধ ও আশাবাদ ছড়িয়ে দিতে। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’