অর্থভুবন ডেস্ক
মানুষ আল্লাহ, ভগবান কিংবা ঈশ্বরের পর যার ওপর বিশ্বাস করে যিনি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারেন, তিনি হলেন ডাক্তার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসক সীমিত সময়ে বেশি রোগী দেখার ফলে রোগের পূর্ববর্তী ঘটনা সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে ভবিষ্যতে রোগীর জন্য বাড়ছে ভোগান্তি, কমছে চিকিৎসকের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডাক্তার রোগীর সমস্যার বিপরীতে যে পরামর্শ আর ওষুধ দেন-তাতে বিস্তর পার্থক্য থাকে। আবার তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, প্রেসক্রিপশনে কোনো ওষুধ লিখলে ওষুধ কোম্পানির কাছে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া অযাচিত পরীক্ষা, ডায়াগনোসিস না করা, রোগ বুঝে রেফার না করা, রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফি নিয়ে দরকষাকষি, মৃত রোগীকে আইসিউতে ভর্তি রাখা, আইনি জটিলতা, হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা না দেওয়া, স্বাস্থ্যগত বিষয়ে ভুল রিপোর্ট প্রদান ইত্যাদি অবহেলাজনিত কারণে রোগীরা এখন ডাক্তারদের কাছে হয়ে গেছে বাজারে ক্রয়যোগ্য পণ্যের মতো, যার মাধ্যমে তারা লাভবান হচ্ছেন, সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। এমন কিছু অপরিণামদর্শী চিকিৎসকের অতিলোভের কারণে পুরো চিকিৎসক সমাজের বদনাম হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের হাতে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় মৃত্যু নতুন কোনো ঘটনা নয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ ঘটনা অনেক দেশেই ঘটেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং এশিয়ার বড় বড় হাসপাতালেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগীর ভুল চিকিৎসার পেছনে রয়েছে কোনো কোনো ডাক্তারের ব্যবসায়ী মনোভাব। কেউ কেউ তো রোগীকে পণ্য মনে করেন। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০৪ এ ধারামতে, কোনো ব্যক্তি বেপরোয়াভাবে বা অবহেলাজনিত কোনো কাজের মাধ্যমে কারও মৃত্যু ঘটালে এবং সেই অপরাধ শাস্তিযোগ্য নরহত্যা না হলে, সেই ব্যক্তি অবহেলাকারী হিসাবে বিবেচিত হবেন। এজন্য তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। আশার কথা যে সরকার ভুল চিকিৎসার তদন্ত ও বিচারের জন্য নতুন বিধান সংযোজন করে বিএমডিসি আইনকে শক্তিশালী করার কথা বিবেচনা করছে। ভুল চিকিৎসা প্রমাণিত হলে চিকিৎসকদের সনদ বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হবে। ডাক্তারি পেশা অন্য সব পেশা থেকে ভিন্ন এ কারণে যে, এর সঙ্গে মানুষের শরীর সরাসরি সম্পর্কিত। ডাক্তারদের উচিত ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা বিবেচনায় না রেখে মানবিক দিক থেকে সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। কারণ চিকিৎসা শুধু একটি বিজ্ঞান নয়, এটি একটি শিল্প-যার জন্য প্রয়োজন সহানুভূতি, সমবেদনা ও উৎসর্গ।
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়