অর্থভুবন ডেস্ক
সিএমএসএমই ব্যাংকিংয়েও শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে ট্রাস্ট ব্যাংক। অর্থভুবনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও হুমায়রা আজম
২০০৯ সাল থেকে ট্রাস্ট ব্যাংক একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে মাঝারি উদ্যোগ—সব ধরনের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে আসছে। আদিবাসী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ক্লাস্টারভিত্তিক অর্থায়নের জন্য আমরা গ্রুপ ঋণের ব্যবস্থা রেখেছি, যেখানে গ্রুপ সদস্যরা পরস্পরের গ্যারান্টর হতে পারেন। প্রতিবছরই সিএমএসএমই খাতে আমাদের অর্থায়ন বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও। বিগত তিন বছরে আমরা এই খাতে ২৮ হাজার ৫০০ উদ্যোক্তাকে প্রায় পাঁচ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছি।সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবিলিটি রেটিং ২০২২-এ দেশের প্রথম সাতটি ব্যাংকের মধ্যে এটি স্থান পেয়েছে।
আপনাদের সিএমএসএমই পণ্য ও সেবা কী কী?
সিএমএসএমই অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং সহজ করার লক্ষ্যে আমরা গ্রাহকবান্ধব বিভিন্ন পণ্য ও সেবার প্রচলন করেছি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে ‘ট্রাস্ট নন্দিনী’, ‘ট্রাস্ট একতা’ ও ‘ট্রাস্ট সুকন্যা’। ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে ‘ট্রাস্ট মূলধন’।
আপনাদের ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া কতটা সহজ হয়েছে?
বিভিন্ন গ্রাহকবান্ধব সিএমএসএমই পণ্য ও সেবার প্রচলন করায় আমরা নির্দিষ্ট গ্রাহককে সিএমএসএমই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ সহজভাবেই করতে পারছি।সারা দেশে ১১৫টি শাখা ও সাতটি উপশাখার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের ঋণসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এ খাতে ডিজিটাইজেশনের প্রভাব কেমন?
ব্যাংকিংসেবায় যুগোপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার এ খাতকে দিন দিন সমৃদ্ধ করে তুলেছে। অন্যান্য সেবার পাশাপাশি আমরা সিএমএসএমই গ্রাহকদেরও ডিজিটাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে পারছি। যেমন—অনলাইন ব্যাংকিং, আরটিজিএস, ইএফটিএন, এটিএম সার্ভিস, ডেবিট কার্ড, ব্যাংকিং অ্যাপস, এমএফএস ইত্যাদি। এর ফলে সিএমএসএমই খাতের গ্রাহকরা ব্যাংকিংসেবায় বেশি আগ্রহী হচ্ছেন এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গেও অভ্যস্ত হচ্ছেন।
উদ্যোক্তা তৈরিতে অর্থায়নের পাশাপাশি আর কী সহায়তা দিচ্ছেন?
সফল উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকঋণ একটি সহায়ক উপাদান। ট্রাস্ট ব্যাংক এ খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং আমাদের উদ্যোক্তারা ভালো করছেন। তা ছাড়া অর্থায়নের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ সারা দেশে আয়োজিত বিভিন্ন এসএমই পণ্যমেলায় তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছি। আমরা বিগত সময়ে রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৯৪ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
এ খাতে নারী উদ্যোক্তারা কতটা সহায়তা পাচ্ছেন?
ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তা হেল্পডেস্কের মাধ্যমে প্রায়রিটি সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে। একক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ট্রাস্ট নন্দিনী’ এবং গ্রুপভিত্তিক ঋণের জন্য ‘ট্রাস্ট একতা’ নামের বিশেষ ঋণসেবা চালু আছে, যার মাধ্যমে আমরা সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে থাকি। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল থেকে ৯ শতাংশ হারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনরর্থায়ন সাপেক্ষে ৫ শতাংশ হারে এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ৪ শতাংশ হারে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকি। গত তিন বছরে ১৯ হাজার ২০০ জন নারী উদ্যোক্তাকে ৮৬২.৭৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে আপনার প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন কী ভূমিকা রাখছে?
কৃষি উৎপাদন ও গ্রামীণ অর্থনীতি বিনির্মাণে ‘ট্রাস্ট সুফলা বাংলাদেশ’ নামের আমাদের একটি বিশেষ সিএমএসএমই ঋণসেবা রয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষির প্রধান খাত যেমন—মৎস্য, পোলট্রি, ডেইরি, গরু মোটাতাজাকরণ খাতসহ গ্রামীণ উৎপাদনশীল খাতে সরাসরি ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ প্রদান করা হয়। ট্রাস্ট ব্যাংক কৃষি উৎপাদনে গত তিন বছরে প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার প্রান্তিক উদ্যোক্তাকে এক হাজার ৪৩৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।
তৃণমূলে সিএমএসএমই অর্থায়ন ছড়িয়ে দিতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তৃণমূলে অর্থায়ন ছড়িয়ে দিতে আমাদের রয়েছে ‘ট্রাস্ট প্রান্তিক’ নামের সিএমএসএমই সেবা। এর মাধ্যমে আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে জড়িত যেকোনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কুটির, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া নিজস্ব সক্ষমতার বাইরে তৃণমূল মানুষের মধ্যে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা এমএফআই বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকি। গত তিন বছরে আমরা প্রায় দুই লাখ ৩২ হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কুটির, অতি ক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মোট এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছি। ভবিষ্যতে ব্যাংকের উপশাখা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সহায়তা আশা করেন?
সিএমএসএমই অর্থায়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এসএমই খাতের জন্য নতুন বাজার ব্যবস্থা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, নীতি সহায়তা বৃদ্ধিসহ তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সহজ শর্তে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন পুনরর্থায়ন স্কিমের প্রবর্তন করা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে পারে।
এ খাত নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সিএমএসএমই গ্রাহক বাড়াতে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে শাখা-উপশাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি করা, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতা বৃদ্ধি করা, স্বল্প সময়ে ও স্বল্পসুদে গ্রাহককে ঋণ প্রদান করা, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে অধিকতর সচেষ্ট হওয়া এবং দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ খাতে মোট বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।