একজন সচেতন নাগরিক হওয়ার জন্য দেশের খোঁজখবর রাখতে হয়। শিক্ষা, অর্থনীতি, বাণিজ্য, রাজনীতি, কূটনীতি, সাহিত্য, ধর্ম, খেলাধুলা, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল—এমন সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অর্থনীতির কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিস্থিতি। দেশের রাজনৈতিক হালচাল পত্রিকা পড়ে জানা যায়। একজন স্মার্ট মানুষ হলেন তিনি, যার কাছে অনেক বেশি তথ্য আছে। আর তথ্যের অন্যতম উৎস হলো পত্রিকা।
পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে
পত্রিকায় পড়াশোনাসংক্রান্ত লেখা ছাপা হয়। যেখানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার প্রস্তুতিমূলক লেখা থাকে। এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন শ্রেণির মডেল টেস্ট থাকে। আর শিক্ষার্থীরা সেসব মডেল টেস্ট দেখে ঘরে বসে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শমূলক লেখা থাকে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন শিক্ষার্থী যিনি হয়তো ওই সব বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করা, ক্লাস করা ও পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ কখনো হতো না। কিন্তু পত্রিকার মাধ্যমে ঘরে বসে সেসব অভিজ্ঞ শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জানার সুযোগ হয়।
ক্যারিয়ারের খোঁজখবর পেতে
সংবাদপত্রে সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ফলে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা অনুযায়ী সেসব চাকরিতে আবেদন করা যায়। কবে, কোথায়, কোন সময় পরীক্ষা—এসব জানা যায়। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সংবাদ, বৃত্তি, কোর্স প্রভৃতির খোঁজখবর ও পরামর্শমূলক লেখা পাওয়া যায়। ফলে যে শিক্ষার্থী দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করতে যাবে, সেও পত্রিকা পড়ার ফলে উপকৃত হবে। দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশের জন্য কারা গৌরব বয়ে আনল তাদের নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হয়। আর এসব পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এতে অংশ নেওয়ার করার আগ্রহ বাড়ে।
চাকরির প্রস্তুতি নিতে
বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতির জন্য পত্রিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা—এই তিন ধাপেই সফল হওয়ার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। এতে বিসিএস, ব্যাংকারসহ অন্যান্য চাকরিতে সফলদের প্রস্তুতি, পরামর্শ, অভিজ্ঞতা প্রভৃতি ছাপা হয়। ফলে যেসব চাকরিপ্রার্থীর পরামর্শ দেওয়ার মতো মেন্টর নাই, তিনি ঘরে বসেই বিভিন্ন চাকরিতে সফলদের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা জানতে পারেন। অনেক তথ্য, উপাত্ত, উক্তি চাকরির লিখিত পরীক্ষার খাতায় ব্যবহার করে ভালো নম্বর পেয়ে সফল হওয়ার সুযোগ থাকে। চাকরিপ্রার্থীরা পত্রিকা পড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ও লেখা কেটে রেখে দেন পরবর্তী সময়ে পড়ার জন্য। ভাইভাতে বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে থাকে, যাঁরা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন তাঁরা এসব প্রশ্নের উত্তর ভালো দিতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্লেষণের দক্ষতা বাড়ে। ফলে চাকরির লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা অথবা কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে হলে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা যায়।
উদ্যোক্তা হতে চাইলে
দেশের অনেক সাহসী শিক্ষার্থী আছেন যাঁরা গতানুগতিক চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরি দিতে চান। তাদের জন্যও পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হয়। নানা বাধা অতিক্রম করে যাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হয়। সেসব ফিচার পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। কী ধরনের বাধা অতিক্রম করতে হবে, সে বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ের নিত্যনতুন ধারণা পায়। বিভিন্ন আপডেট তথ্যও জানতে পারে। ফলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুতি করতে পারে।
বিনোদন পেতে
পত্রিকা শুধু জ্ঞান আর তথ্যের ভান্ডার নয়। এটি বিনোদনেরও অন্যতম মাধ্যম। বিনোদনের এক বা একাধিক পাতা বের হয়। কোনোটায় সাপ্তাহিক ফিচার পাতাও বের করা হয়। সেখানে বিনোদন জগতের সব খোঁজখবর, ফিচার প্রকাশিত হয়। বিনোদন পাতায় নায়ক-নায়িকাসহ বিনোদনসংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়। অনেকের কাছে শুধু বিনোদন পাতা নয়, সমগ্র পত্রিকা পড়াটাই তাঁর কাছে বিনোদন ও শেখার মাধ্যম। তাই অবসর সময়ে একজন শিক্ষার্থী পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে বিনোদন পেতে পারে। অলস সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না দিয়ে, পত্রিকা পড়লে বিনোদনের পাশাপাশি অনেক কিছু জানার ও শেখার সুযোগ হয়। ফলে একজন শিক্ষার্থী সচেতন নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর জীবন গঠনের পাথেয় পায়। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সব শিক্ষার্থীরই উচিত নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করা।