Saturday, December 7, 2024

শূন্য থেকে কোটিপতি আবার শূন্যেই!

অর্থভুবন ডেস্ক

এই নারী শূন্য থেকে কোটিপতি আবার শূন্যেই।
‘মেরি অ্যালেন প্লেজেন্ট’ একটি গুজব
যার জীবনকে একেবারে পাল্টে দিয়ে
ছিল। কোটিপতি থেকে মুহূর্তেই হয়ে
গিয়েছিলেন পথের ফকির। বলা যায়
মুদ্রার এপিট ওপিট দেখেছিলেন তিনি।
মেরি অ্যালেন প্লেজেন্ট ছিলেন প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান কোটিপতি। এমনকি মেরি অ্যালেনই ছিলেন অষ্টাদশ শতকের প্রথম কোটিপতি নারী। যে নিজেই এ অর্থ আয় করেছিলেন। মেরি অ্যালেনের গল্প আমেরিকার যে কোনো উদ্যোক্তার জীবনের গল্পকে হার মানায়। তিনি জর্জিয়ার একটি দাস পরিবারে ১৮১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যদিও তিনি দাবি করতেন, তার জন্মস্থান ছিল ফিলাডেলফিয়া। তাছাড়াও তিনি কখনো দাস পরিবারের কেউ ছিলেন না।
অ্যালেন খুবই ছোটবেলায় বাবা মা থেকে আলাদা হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে একটি সাদা পরিবারে তাকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে পাঠানো হয়। তখনো ম্যাসাচুসেটসে দাস প্রথা প্রচলিত এবং বৈধ ছিল। গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করলেও অ্যালেন সেখানে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। পাশাপাশি তাকে একটি দোকানেও কাজ করতে হতো। তবে এই পড়াশোনা কোনো আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা ছিল না। তবে বেশিদিন তিনি পড়াশোনা চালাতে পারেননি। এক সময় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি নারী-পুরুষের সততা পরায়ণ আচরণ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
কালো হওয়ায় অ্যালেনকে যথেষ্ট বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তবে অ্যালেন বেশ ভাগ্যবতীই ছিলেন বটে! যেখানেই গেছেন প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি সাহায্যের হাতও পেয়েছেন। ১৮৫০ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে সবে মাত্র দাস প্রথা বন্ধ হয়েছে। এরপর পরই ১৮৫২ সালে অ্যালেন সান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমান। এখানে এসেও তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করেন। তবে এবার তার ভাগ্যটা আরেকটু খুলে যায়।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের জন্য তিনি রান্নার কাজ শুরু করেন। কাজ করার পাশাপাশি তিনি ব্যবসায়ীদের কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, প্লেজেন্ট গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন মূলত বিনিয়োগের ধারণা পাওয়ার জন্য। আবার ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিন মারিয়া হাডসনের মতে, গৃহকর্মীর কাজ প্লেজেন্টের একটা ছদ্মবেশী আবরণ ছিল মাত্র। মূলত তিনি তার টাকা-পয়সা বিনিয়োগের উপায় খুঁজেছিলেন।
৩৮ বছর বয়সে সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যালেনের মাসিক বেতন ছিল ৫০০ ডলার। সেই বেতনের টাকা তিনি আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। এছাড়াও তার সুযোগ যেদিকে বেশি আসত সেদিকেই বিনিয়োগ করতেন। তিনি সুযোগ বুঝে সোনা ও রূপার খনিতেও বিনিয়োগ করতেন। বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৮৬০ সালের দিকে তিনি লন্ড্রির ব্যবসা শুরু করেন এবং বেশ ভালো আয় করতে শুরু করেন।
একসময় অ্যালেন থমাস বেল নামে একজন ব্যাংক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। বেল অ্যালেনকে কিছু বিনিয়োগপত্র কেনায় সহায়তা করেছিলেন। কালো বর্ণের বলে বিনিয়োগপত্র কেনায় যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে তাই বেলের নামে অনেকগুলো বিনিয়োগপত্র কিনেছিলেন তিনি। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, তাদের যৌথ বিনিয়োগ থেকে প্রচুর টাকা উপার্জিত হয়েছিল। লন্ড্রি, দুগ্ধজাত পণ্য এমনকি ব্যাংক বিনিয়োগ থেকে তৎকালীন ৩০ মিলিয়ন ডলারের অধিক উপার্জন হয়েছিল। এই সম্পত্তি বর্তমান সময়ের প্রায় ৮৬৪ মিলিয়ন ডলারের সমান।
অষ্টাদশ শতকে একজন আফ্রিকান আমেরিকান নারীর জন্য এতো সম্পত্তির বহিঃপ্রকাশ করা সহজ কাজ ছিল না। তবে অ্যালেন তা গোপনও রাখতে চাননি। তিনি তৎকালীন এক লাখ মিলিয়ন ডলার (যা বর্তমানে আনুমানিক প্রায় ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন) অর্থ ব্যয় করে অনেক বড় অট্টালিকা তৈরি করেন। সেখানে তিনি বেল ও তার পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি ক্রয় করতে থাকেন। অষ্টাদশ শতকের শেষে তিনি সান ফ্রান্সিসকোতে ৯৮৫ একরের গবাদি পশুর খামার ক্রয় করেন।
অ্যালেন প্রথমবার সম্পদশালী এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যিনি মারা যাওয়ার সময় প্রচুর সম্পত্তি অ্যালেনের নামে রেখে যান। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে অ্যালেনের কোনো সন্তান হয়নি। একজন দাস কিংবা গৃহকর্মী থেকে অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ার বিষয়টি অনেকেরই সহ্য হতো না। তাই তার প্রতি হিংসায় অনেকেই কুৎসা ও গুজব রটাতে থাকে। প্লেজেন্টকে বেলের উপপত্নী হিসেবে প্রচার করতে থাকে। অনেকেই গুজব রটাতে থাকে, তার জমকালো অট্টালিকা পতিতালয়ে পরিণত করেছেন। এছাড়াও তিনি জাদুবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।
অ্যালেনের বিরুদ্ধে গুজব প্রমাণে তার কিছু কর্মকাণ্ডকে সামনে আনা হয়। অ্যালেন ভূগর্ভস্থ রেলপথে কাজ করতেন দাসদের মুক্ত করতে। এক্ষেত্রে তিনি স্বামীর দেয়া সম্পত্তিই খরচ করতেন। সংগ্রাম করতেন মৃত্যুদণ্ড থেকে তাদের বাঁচাতে। এছাড়াও দাসদের আবাসনের ব্যবস্থা করতেন। হয়তো এসব কারণেই তার নামে পতিতালয় চালানোর গুজব রটানো সহজ হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে তার মহৎ এসব কাজের জন্য তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘মাদার অব সিভিল রাইট’ উপাধি পান।
তবে নানা গুজব আর কুৎসায় অ্যালেনের খ্যাতি দ্রুত কমতে থাকে। কিছু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত তার জাদুবিদ্যা ও পতিতাবৃত্তি নিয়ে মিথ্যা খবর ছাপাতে থাকে। এছাড়াও বেলকে জড়িয়েও তার নামে চলতে নানা গুজব। ১৮৯২ সালে তার বিনিয়োগের অংশীদার বেল মারা যান। বেলের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী অ্যালেনের নামে লাখ লাখ ডলার সম্পত্তির অংশ জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
নিজের অর্থে এ অট্টালিকা তৈরি করেছেন অ্যালেন। আদালতে তার প্রমাণ দেখাতে পারলেও মামলায় হেরে যান তিনি। ১৯০৪ সালে ৯০ বছর বয়সে অ্যালেন মারা যান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাকে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটাতে হয়েছিল। আর শেষকালে দরিদ্রতাই ছিল তার বড় সঙ্গী। কুৎসা রটনা, গুজব, হিংসা, দালিলিক প্রমাণবিহীন ব্যবসার কারণেই তার শেষ পরিণতি এমন হয়েছিল। তাই আপনার কষ্টের অর্জনের প্রতি যত্নবান হোন।
সূত্র: সিএনবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস
spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here