অর্থভুবন প্রতিবেদক
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী কমডোর গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় ২০০৫ সালে খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলাম প্রকাশ ওরফে বিলাই সাইফুলকে পুনঃবিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ কালবেলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, কারাদণ্ড পাওয়া আসামি মো. সাইফুল প্রকাশ ওরফে বিলাই সাইফুলকে প্রথম দফা বিচারে ২০০৫ সালে দেওয়া রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছিল। সেই আদেশের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলে হাইকোর্ট সাইফুলের বিষয়ে নতুন করে রায় দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ দেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা পরোয়ানা মূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী মাইক্রোবাস যোগে নিজ কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এসময় নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় পৌঁছলে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রাব্বানী নৌ-পরিবহন বিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য দেন। সেসময় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার একেএম এমতাজুল ইসলাম বাদী হয়ে কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২৮ আগস্ট সাত আসামি আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেমের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন পুলিশ।
২০০৫ সালে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হাশেম ও আব্দুল মালেক সোহেল নামের তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। অন্য দুই আসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে ৫ বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। খালাস দেওয়া হয় এ মামলার দুই আসামি মানসুর আলম ও সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুলকে।
আপিল শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার রায় ঘোষণার পর ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্ট আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
এ ছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া তিন আসামির মধ্যে মো. হাশেম ও সোহেল হাইকোর্টে খালাস পান, মো. সেলিমের যাবজ্জীবন বহাল থাকে। আর খালাস পাওয়া আসামি সাইফুলের নতুন রায় দিতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের ওই আদেশের পর চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে দুই আসামি চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম। খালাস পাওয়া আসামিদের মধ্যে সাইফুলের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলেও মানসুর আলমের বিরুদ্ধে করেনি।