অর্থভুবন প্রতিবেদক,রংপুর
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে রোগীর পথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাজার দরের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে পথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালকসহ একটি চক্রের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শুধু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হাসপাতাল পরিচালকের অবৈধ আর্থিক লেনদেন রয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে হাসপাতালের পথ্য সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পথ্য সরবরাহের কার্যাদেশে দেখা যায়-প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৪২৮ টাকা, ছোট মুরগি ৭১৫ টাকা, মাছ ৬১১ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১৭০ টাকা। এভাবে বাজার দরের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নাম ভিন্ন হলেও তারা প্রত্যেকে একই ঠিকানা ব্যবহার করছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। এ নিয়ে হাসপাতালের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, এ প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা বলেন, কয়েক বছর আগে স্থানীয় তিনজনের হাতে নিয়ন্ত্রণ ছিল। দরপত্রে চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে তারা অংশ নিয়ে কাজ বাগিয়ে নিত। অভিযুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হাসপাতালের পাশের মহল্লায়। অভিযোগকারীরা আরও বলেন, কখন দরপত্র আহ্বান করা হয় অথবা কী প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেওয়া হয় তা ওই চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ জানতে পারে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খাসির মাংস, ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ, মৃগেল মাছ, কাতল মাছ, ডিম সরবরাহ করছে মেসার্স সোনাম ট্রেডার্স। ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা হলেও তারা সরবরাহ করছে ৪২৮ টাকা কেজি দরে। কক বাচ্চা মুরগি বাজারে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা হলেও ৭১৫ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হচ্ছে। আড়াইশ টাকা কেজির রুই ৬১১ টাকা, ২০০ টাকার মৃগেল ৪৯৪ টাকা, ৩০০ টাকা দরের কাতল ৫৮৫ টাকা, খাসির মাংসের দম ৮০০ টাকার নিচে হলেও ১ হাজার ১৭০ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ আর ট্রেডার্স মিষ্টি কুমড়া ৫২ টাকা, বরবটি ৬৫ টাকা দরে সরবরাহ করছে।
প্রিমিয়াম ট্রেডার্স চাল, আটা, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করছে। সয়াবিন তেল, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন মসলা বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। মেসার্স নুরাইজ ট্রেডার্স গুঁড়াদুধ প্রতি কেজি ১ হাজার ৯২ টাকা, হরলিক্স ৫৮৫ টাকা দরে সরবরাহ করছে। মিষ্টি দইয়ের জন্য বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দাম নিচ্ছে।
চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মঞ্জুর আহমেদ আজাদ বলেন, বিধিবিধান অনুসরণ করে পথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেলেও আগের দামে পথ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তখন কেউ এ নিয়ে কথা বলেন না। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী বলেন, দুর্নীতি অনেক কমিয়ে এনেছি। নাম পরিবর্তন করে একই ঠিকানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এটি যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব তার নয়। দরপত্র কমিটির সদস্যরা এর কারণ বলতে পারবেন।