অর্থভুবন ডেস্ক
একই রাতে একই হাসপাতালে মারা গেছেন জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা (৮৪)। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তারা।
দুই সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গত বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ন্যাম ভবনের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল ও আব্দুস সাত্তার ভূঞার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু এতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তাদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। জানাজায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও সংসদ সদস্যসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই সংসদ সদস্যের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড মো. আবদুর রাজ্জাক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, শাহজাহান কামাল শনিবার ভোর ৩টা ১৯ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শাহজাহান কামাল ১৯৬৩ সালে লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, চৌমুহনী এসএ কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে এমপি আব্দুস সাত্তার ভূঞার একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ভোর ৩টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আব্দুস সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আব্দুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য হন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন।
আব্দুল সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন।