অর্থভুবন ডেস্ক
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন—এমন বক্তব্য প্রায়ই দিয়ে থাকেন উপাচার্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনার প্রধানতম অনুষঙ্গ নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবাটাই পাচ্ছেন না এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য বিডিরেন থেকে ২০০০ মেগাবাইট এবং ব্যাকআপ হিসেবে বিটিসিএল থেকে ৫০১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইটথ ব্রডব্যান্ড সরবরাহ করা হয়। তবে আবাসিক হলগুলোর জন্য এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনাও নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান।
কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট বিড়ম্বনায় পড়েন ঢাবির আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে আবাসিক হল ও হোস্টেলের সংখ্যা ২৩। সেখানে আবাসিক ও দ্বৈত আবাসিক মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর বসবাস।ইন্টারনেট সেবা পেতে তাঁরা সবাই এখন ছাত্রলীগের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা করা বিভিন্ন কোম্পানির হাতে জিম্মি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় বাংলানেট, ইউসিএল, কেএস নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন কোম্পানি ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবসা করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলগুলো কারা ইন্টারনেট সেবা দেয়, তা জানেন না প্রাধ্যক্ষরা। এ বিষয়ে একাধিক হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইন্টারনেট কারা সার্ভিস দেয়, সে বিষয়ে তাঁরা কেউ অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
ইউসিএল কোম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কক্ষে ফ্রি সেবা দিতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবসায় ক্ষতি পোষাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলো থেকে একটু বেশি বিল নিতে হয়।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট নিয়ে এমন বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নেই। হাজার হাজার ছাত্র এ নিয়ে কষ্টে আছে। তারা ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্যই দায় আছে এখানে।’
বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে অনেক রিসোর্স রয়েছে, তার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সেবার প্রয়োজন। সেই ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক আইসিটি বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিকেল ৫টার পরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ শেষ হয়ে যায়। ছুটির দিনগুলোতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে কোনো কাজ থাকে না।
সে সময়ে সেখানে স্পিড কমিয়ে ব্যান্ডউইটথ আবাসিক হলগুলোর দিকে ফেরানো হলে শিক্ষার্থীরা ফ্রি ইন্টারনেট সেবা পাবেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী যদি আরেকটু বেশি ব্যান্ডউইটথ নেওয়া হয় এবং হলগুলো তদারক করার জন্য প্রাইভেট কোনো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলেও শিক্ষার্থীদের ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব।
আইসিটি সেল দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) অধীনে। ইন্টারনেট নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লাভ হবে। পাশাপাশি বিষয়টি সুন্দরও হবে বলে মনে করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তবে এ বিষয়ে ভাবছেন না আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, হলে নিরবচ্ছিন্ন সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে, আরেকটি দপ্তরের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে যেভাবে রয়েছে, সেভাবে চলমান থাকুক।