Monday, September 16, 2024

নিজের আগ্রহে খেলাধুলা, আর মায়ের ইচ্ছায় পড়ালেখা করেছি

অর্থভুবন প্রতিবেদক

ছেলেবেলায় খেলাধুলার জন্য বাসা থেকে খুব সমর্থন পেয়েছি, এমনটা বললে ভুল হবে। পরিস্থিতি ছিল উল্টো। মা খেলতে দিতে চাইতেন না। আমার এক মামা ছিলেন, নাম সোবহান প্রামাণিক। তাঁর সঙ্গে লুকিয়ে খেলতে যেতাম। বলা চলে, মামার হাত ধরেই আমার খেলাধুলার শুরু। বিকেএসপিতে ভর্তির আগে ফরিদপুরে প্রশিক্ষণ নিতাম, সঙ্গে থাকতেন মামা।

তখনো তো আমি একেবারেই ছোট, ফরিদপুর-খুলনা-ঢাকা গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মামা নিয়ে যেতেন, নিয়ে আসতেন। মা প্রথম দিকে রাগারাগি করলেও মামা সঙ্গে থাকায় একসময় একটু ছাড় দেন।

সত্যি বলতে, আমি নিজের আগ্রহে খেলাধুলা, আর মায়ের ইচ্ছায় পড়ালেখা করেছি। বকুনির ভয়ে চেষ্টা করতাম দুদিকেই ভারসাম্য রেখে চলতে। চেষ্টা অনেকখানিই সফল হয়েছে বলা যায়। পিইসি, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। অন্যদিকে, ফুটবলে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৪–তে আমরা চ্যাম্পিয়ন ও অনূর্ধ্ব-১৭–তে রানার্সআপ হই।

বাংলাদেশ গেমসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলাম। ২০২১ সালে বিশ্ববিখ্যাত জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ সারা বিশ্ব থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় খোঁজার কার্যক্রম চালায়। সেখানে আমি ছিলাম শীর্ষ ৩৫–এর মধ্যে।

সর্বশেষ এ বছর বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিলাম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে সাফে অংশ নেওয়ার কারণ হলো, এত দিনে খেলাধুলাটা আমার পেশা হয়ে গেছে। ২০২১ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে আছি। চিন্তা করে দেখলাম, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরের বছরেও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারব। কিন্তু সাফে এবার না গেলে পরেরবার ডাক না–ও পেতে পারি। তা ছাড়া বাংলাদেশের জার্সি গায়ে এত বড় টুর্নামেন্টে দেশের জন্য খেলতে পারা একটা বড় ব্যাপার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এই তরুণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এই তরুণছবি: সংগৃহীত

সব সময় পড়া আর খেলার ভারসাম্য রেখে চলেছি। কিন্তু এবার আমাকে যেকোনো একটা বেছে নিতেই হতো। সবকিছু মিলিয়ে দেখলাম, সাফে অংশ নেওয়ার সুযোগটাই আমার জন্য বড়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাংলাদেশ ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করছি, এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করি কীভাবে!

মা একসময় খেলার বিপক্ষে ছিলেন ঠিক। কিন্তু এখন তাঁর রোমাঞ্চও কারও চেয়ে কম না। যেদিন আমার খেলা থাকে, টিভির সামনে বসে থাকেন মা। স্বজনদের ফোন করে করে আমার জন্য দোয়া চান। কিন্তু আমি যেন পড়ালেখাটা ঠিকভাবে করি, সেই স্বপ্ন তো মায়ের সব সময়ই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলোয়াড় কোটায় ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ায় এবার মায়ের স্বপ্নটাও পূরণ হলো।

এখন মনে হয়, চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে গেল। আপাতত ভালোভাবে স্নাতকটা করতে চাই। স্বপ্ন দেখি—একদিন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতা হব, দেশের জন্য আনব সাফ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি।

spot_imgspot_img

ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায় রাশিয়ার মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার একটি এলাকায় দেশটির মালবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। অনুমোদিত না এমন ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের পর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। বুধবার রেল অপারেটর এ...

ইসরাইলকে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমতীরে তাদের কার্যক্রমে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমতীরে সম্ভবত একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যার কথা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর স্বীকারের...

২০২০ সালের নির্বাচনে হার মানতে আবারো অস্বীকার ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয় মেনে নিতে আবারো অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here