অর্থভুবন প্রতিবেদক
চলনবিলের জোলার বাতা ও নিংগইন বিলে বানার বাঁধ ও সোঁতিজালে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজপ্রাণী শিকার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে এই দুই বিলে মাছ শিকারে মেতেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বানা ও পলিথিন দিয়ে এই দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ছোট-বড় সব রকমের মাছ ধরা পড়ছে ও বিলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। আর প্রশাসনের নাকের ডগায় এই দুই বিলের খবর জেনেও মৎস্য কর্মকর্তা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সিংড়া পৌর শহরের জোলারবাতা এলাকায় উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় বানার বাঁধ দিয়ে ঘেরা। ফলে সেখানে বিলজুড়ে কচুরিপানার জট বেঁধেছে। বন্ধ রয়েছে নৌ চলাচল। এই বানার বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার অনুসারীরা। জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, তারা দমদমা পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ থেকে এই বিলের অংশ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে এই ব্যবস্থা করেছেন। আর এই টাকা মসজিদের উন্নয়নেই ব্যয় করা হয়। বিষয়টি এলাকার সবার জানা রয়েছে। আর বরাবরই এই বিল মসজিদ থেকে ইজারা নেওয়া হয়। তাছাড়া তারা সেখানে অন্যদের মাছ ধরতে বাধাও দিচ্ছেন না। তাহলে সমস্যাটা কোথায় বলে এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রাখেন?
অপরদিকে নিংগইন বিলে আধা কিলোমিটার এলাকায় বানা ও পলিথিনের বাঁধ দিয়ে পানির স্রোতে নেট জালে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এর ফরে ছোট-বড় মাছ ও কাঁকড়া, শামুক নিধন করা হচ্ছে। এই অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন শেরকোল ধুলাউড়ি গ্রামের আ.লীগ কর্মী হযরত আলী ও সাদ্দাক হোসেন। নিংগইন ভাটোপাড়া, আদর্শগ্রাম ও ঘুনপাড়া তিনটি মসজিদের নামে তারা ইজারা নিয়েছেন। সেখানে সোঁতিজালের ফাঁদে যে মাছ ধরা পড়ব তা মসজিদ কমিটির সঙ্গে অর্ধেক ভাগাভাগি হবে। সোঁতির মালিক সাদ্দাক বলেন, তারা ৪০ ভাগ পাবে, আর ৬০ ভাগ পাবে তিনটি মসজিদ। আর এভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি অন্যায় স্বীকার করে সাদ্দাক হোসেন বলেন, মসজিদ কমিটিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বরাবরই এ দুই বিল ইজারা দিয়ে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিমের বেতন ও উন্নয়ন করে থাকেন। আর তারা তো এই টাকা নিজের পকেটে ভরছেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, চলনবিলের মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা প্রশাসন সব সময়ই তৎপর এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে এই বাঁধের বিষয়ে তিনি অবগত নন ও মৎস্য বিভাগ জানার পর কেন তাকে অবগত করেননি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।